বাগধারা (অর্থ সহ বাক্য)
অ - বাগধারা
অমাবস্যার চাঁদ = (অদর্শনীয় বস্তু, দুর্লভ বস্তু) – আজকাল তোমাকে দেখাই যায় না, চাকরি পেয়ে কি অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেলে?
অকালকুষ্মাণ্ড = (অপদার্থ) – মন্টুর মতো অকালকুষ্মাণ্ড ছেলেকে দিয়ে এ কাজ সম্পন্ন হবে কিছুতেই সেই আশা করা যায় না।
অন্ধের ষষ্ঠী = (একমাত্র অবলম্বন) – বিধবা মায়ের অন্ধের ষষ্ঠী পুত্রটিও শেষে মারা গেল।
অরণ্যে রোদন = (নিষ্ফল আবেদন)- কৃপণের কাছ ধন চাওয়া আর অরণ্যে রোদন করা সমান কথা।
অর্ধচন্দ্র দেওয়া = (গলা ধাক্কা দেওয়া) – লোকটি চাঁদা চাইতে এসেছিল কিন্তু তাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করা হলো।
অহিনকুল-সম্বaন্ধ = (চির-শত্রু, ভীষণ বৈরীভাব) – তারেক সাহের এবং সাদেক সাহেব পাশাপাশি বাড়িতে বাস করেন কিন্তু তাদের মধ্যে অহিনকুল-সম্বন্ধ।
অগাধ জলের মাছ = (অত্যন্ত চালাক)- লোকটি যে এতটা অগাধ জলের মাছ তা আমি আগে টের পাইনি।
অক্কা পাওয়া = (মরে যাওয়া) – এরকম বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে সহজেই অক্কা পেতে হবে।
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা = (পরের অনুরোধে কষ্ট স্বীকার করা)- বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়।
অদৃষ্টের পরিহাস = (ভাগ্যের বিড়ম্বনা) – অদৃষ্টের পরিহাসে রাজা-বাদশাও পথের ফকির হয়ে যায়।
অকূলপাথর = (মহাবিপদ) – আহাম্মদ সাহেবের অকাল মৃত্যু তাঁর পুরো পরিবারকে অকূলপাথরে ভাসালো।
অগস্ত্য যাত্রা = (চির প্রস্থান, শেষ বিদায়)- ভক্তদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহানায়ক অগস্ত্য যাত্রা করলেন।
অগ্নি পরীক্ষা = (কঠিন পরীক্ষা) – সাহস হারালে জীবনের এই অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে কি করে?
অচল পয়সা = (অকেজো হয়ে পড়া, মূল্যহীন)- এ সমাজে বৃদ্ধ লোকেরা অচল পয়সার মতো।
অথৈ জলে পড়া = (ভীষণ বিপদ) – অকালে স্বামী হারিয়ে মেয়েটি একেবারে অথৈ জলে পড়েছে।
অমৃতে অরুচি = (মূল্যবান জিনিসের প্রতি অনীহা) – এত সুন্দর চাকরিটা জুট করে ছেড়ে দিলে, অমৃতে অরুচি ধরেছ নাকি?
অন্ধকারে ঢিল মারা = (অনুমানের সাহায্যে উদ্দেশ্য হাসিল করা) – অন্ধকারে ঢিল মারা স্বভাবটা বাদ দাও, কবে যে ঢিল তোমার পিঠেই এসে পড়বে কে জানে।
অন্ধি-সন্ধি = (গোপন তথ্য) – নিজেকে তুমি আর লুকাতে পারবে না, তোমার অন্ধি-সন্ধি আমি জেনে ফেলেছি।
অন্তরটিপুনি = (অলক্ষে অন্যের হৃদয়ে আঘাত দেয়া) – অন্তরটিপুনি স্বভাব অনেক সময় দাম্পত্য কলহের কারন হয়ে দাঁড়ায়।
আ - বাগধারা
আকাট মূর্খ = (জ্ঞানহীন) – কে বলবে সে শিক্ষিত, এত এত বিদ্যা পেটে পুরেও শেষ পর্যন্ত সে আকাট মূর্খই রয়ে গেল।
আকাশকুসুম = (অসম্ভব কল্পনা) – ওসব আকাশকুসুম ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই, বাস্তবে ফিরে এস।
আকাশ-পাতাল = (দুস্তর ব্যবধান) – হাবিব ও হাসান সহোদর ভাই, কিন্তু দুজনের চরিত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
আক্কেল গুড়ুম = (স্তম্ভিত) – এইটুকু ছেলের কথা শুনে আমার তো আক্কেল গুড়ুম।
আকাশ ভেঙে পড়া = (মহাবিপদ) – বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শারমিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
আক্কেল সেলামী = (নির্বুদ্ধিতার শাস্তি) – বিনা টিকেটে যারা রেল ভ্রমণ করে তাদেরকে মাঝে মধ্যে আক্কেল সেলামী দিতে হয়।
আকাশে তোলা = (মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা) – প্রশংসা করতে করতে তাকে আকাশে তুলেছ তো এখন আর কাউকে সে পাত্তাই দেয় না।
আক্কেল দাঁত = (বুদ্ধির পরিপক্বতা) – এসব কঠিন কথার মর্ম তুমি বুঝবে না; তোমার তো দেখি আক্কেল দাতই গজায়নি।
আখের গোছানো = (স্বার্থ হাসিল করা) – লোকটাকে দেখে তো ভালই মনে হয়েছিল, কিন্তু সে যে সবার সর্বনাশ করে আখের গোছাবে কে জানে?
আগুন নিয়ে খেলা = (বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা) – ছাপোষা কর্মচারী হয়ে মাকিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছ; এ যে আগুন নিয়ে খেলা তা একবার ভেবে দেখেছ?
আগুন লাগা সংসার = (ভেঙে যাচ্ছে এমন সংসার) – আজীবন শুধু সুখ সুখ করছ, কিন্তু এমন আগুন লাগা সংসারে সুখ আসবে কি করে!
আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ = (হঠাত বড় লোক হওয়া) –যারা আঙ্গুল ফুলে কালাগাছ হয় তারা ধরাকে সরজ্ঞান করে।
আঁতে ঘা = (মনকষ্ট) – এমনিতেই ভালই, কিন্তু টাকা চাইলেই তোমার আঁতে ঘা লাগে।
আদাজল খেয়ে লাগা = (উঠে পরে লাগা, সবিশেষ চেষ্টা) – সে তো তোমার কোন ক্ষতি করেনি; তাঁর ক্ষতি করার জন্য তুমি এভাবে আদাজল খেয়ে লেগেছ কেন?
আদায়-কাচঁকলায় = (শত্রুতা) – তারা একই এলাকার লোক কিন্তু দুজনে আদায়-কাচঁকলায় সম্পর্ক।
আঠার মাসে বছর = (দীর্ঘসূত্রিতা) – সাত দিনের মধ্যে সে কিছতেই একাজ সম্পন্ন কতে পারবে না- তার তো আঠার মাসে বছর।
আটকপালে = (হতভাগা) – বিয়ের দিন না পেরোতেই স্বামী হারালো, কী আটকপালে মেয়েরে বাবা!
আমড়া কাঠের ঢেঁকি = (অপদার্থ) – তোমাকে বললাম একটা কর্মঠ ছেলে এনে দিতে, আর তুমি এনে দিলে একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি।
আধাঁর ঘরের মানিক = (অতি প্রিয় বস্তু) – এক মাত্র এই পুত্র সন্তাটিই বিধবা মায়ের আধাঁর ঘরের মানিক।
আষাঢ়ে গল্প = (আজগুবি গল্প) – যুগ পাল্টেছে, এখন আর আষাঢ়ে গল্প কেউ শোনে না।
আপন পায়ে কুড়াল মারা = (নিজের অনিষ্ট করা) – দুষ্ট লোকের পাল্লায় পড়ে মেয়েটা আপন পায়ে কুড়াল মারলো।
ই - বাগধারা
ইচঁড়ে পাকা = (অকালপক্ব) – ছেলেটা এমন ইচঁড়ে পাকা হয়েছে যে, সব কিছতেই মুরুব্বীয়ানা ফলাতে চায়।
ইঁদুর কপালে = (মন্দ ভাগ্য) – এতো কষ্ট করেও সুখের মুখ দেখলে না, তুমি আসলেই একটা ইঁদুর কপালে।
ইতরবিশেষ = (বৈষম্য) – ধনী-গরীবের এই ইতরবিশেষ ভুলে গিয়ে মানুষকে মানুষের মর্যাদা দাও।
উ - বাগধারা
উড়নচণ্ডী = (অমিতব্যয়ী) উড়নচণ্ডী ছেলেটাকে নিয়ে বাবা-মা বিপদে পড়েছে।
উত্তম-মধ্যম = (প্রহর) – উত্তম-মধ্যম দিয়ে গ্রামবাসীরা চোরটাকে ছেড়ে দিল।
উভয় সংকট = (দু’দিকেই বিপদ) – বড় সাহেবের কথামতো না চললে চাকরি যাবে, এদিকে জ্বলজ্যান্ত মিথ্যেয়াকেও হজম করতে পারছিনা- আমি পড়েছি উভয় সংকটে।
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো = (অপাত্রে দান) – চোরের কাছে ধর্মের কাহিনী বলা আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা।
উঠতে বসতে = (সব সময়) – শ্বশুরের কাছ থেকে যৌতুকের অর্থ গ্রহন করেছ – এখন উঠতে বসতে বুয়ের খোটা শুনতেই হবে।
উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে = (একজনের অপরাধ অন্যের উপর চাপানো) – অসাধু লোকেরা বরাবরই উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চায়।
উড়ে এসে জুড়ে বসা = (অযাচিতভাবে এসে সর্বেসর্বা হওয়া) – তুমি কে হে উড়ে এসে জুড়ে বসেছ?
ঊনপঞ্চশ বায়ু = (পাগলামি) – ওর সামনে বিয়ের কথা তুল না, এখনি কিন্তু ঊনপঞ্চাশ বায়ু বেড়ে যাবে।
ঊনপাঁজুরে = (হতভাগ্য) – মিছিমিছি ঊনপাঁজুরে বলে মেয়েটার মন কেন খারাপ করে দিচ্ছ; দেখবে একদিন সে ঠিকই সৌভাগ্যের মুখ দেখবে।
এ - বাগধারা
একচোখো = (পক্ষপাত) – জিম্বাবুয়ের একচোখো আম্পায়ারটা বাংলাদেশের পরাজয়কে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
এলাহি কাণ্ড = (বিরাট ব্যাপার) – সামান্য বিষয়টাকে নিয়ে তোমরা একেবারে এলাহি কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলেছ।
এক নজরে = (অতি অল্প সময়ের জন্য) – শুধু এক নজরে তোমাকে দেখার জন্য এত হূর থেকে ছুটে এসেছি।
এক ঢিলে দুই পাখি মারা = (এক সাথে দুই কাজ সমাধান করা) – গাইড হাউস মঞ্চে নাটক দেখবো সে সাথে টুকিটাকি বাজারটা ও সেরে নেব - এক ঢিলে দুই পাখি মারব আর কি।
একাদশে বৃহস্পতি = (সুসময়) – পাস করতে না করতেই আপনার ছেলেটা ভাল চাকরি পেয়ে গেল, আপনার তো ভাই একাদশে বৃহস্পতি।
একাই একশ = (অসাধারণ কর্মকুশল) – আসাদ থাকতে আমাদের কোন চিন্তা নেই, সে তো একাই একশ।
এক কথার মানুষ = (যার কথায় নড়চড় হয় না) – বড় সাহেবের সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হবে না, তিনি এক কথার মানুষ।
এক মাঘে শীত যায় না = (বিপদ একবার আসে না) – বিপদ চলে গেছ তাই তিনি আমাদের ঝোঁজ নেন না, কিন্তু বিপদ আসতে কতক্ষন, এক মাঘে শীত যায় না।
এসপার ওসপার = (মীমাংসা) – খামাখাই মামলাটাকে তোমরা ঝুলিয়ে রেখেছ – এবার একটা এসপার – ওসপার করে ফেল।
এক ক্ষুরে মাথা মুড়ানো = (একই প্রকৃতির লোক) – টুটুল যেমন বেয়াদব, সেন্টুও তেমনি- দু’জনে যেন একই ক্ষুরে মাথা মুড়ানো।
এলোপাতাড়ি = (বিশৃঙ্খলভাবে) – পড়ার টেবিলে বই – পুস্তুকগুলো এলোপাতাড়িভাবে পড়ে আছে।
ও - বাগধারা
ওজন বুঝে চলা = (আত্মসম্মান রক্ষা করা) – বয়স কিন্তু আপনার কম হয়নি, এবার ওজন বুঝে চলুন।
ওষুধ পড়া = (প্রভাপ পড়া) – মেয়েটি আগে এমন ছিল না, কে যেন অকে ওষুধ পড়া দিয়েছ।
ক - বাগধারা
কই মাছের প্রান = (যা সহজে মরে না) – কী কই মাছের প্রাণরে বাবা – এত মার খেয়েও চোরটা দিব্বি হেঁটে যাচ্ছে।
কড়ায়গণ্ডায় = (পুরুপুরি) – তোমাদের পাওনা আমি কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছি।
কথায় চিড়া ভিজা = (বিনা ব্যয়ে কার্য সিদ্ধি) – শুধু মিঠা কথায় চিড়া ভিজবে না, মাল ছাড়তে হবে।
কলুর বলদ = (পরাধীন/নির্বিকারে যে পরিশ্রম করে) – কলুর বলদের মতো সারাজীবন শুধু খেটেই মরল, বিনিময়ে কি পেল?
কলির সন্ধ্যা = (কষ্টের সূচনা) – এটুকু কষ্ট দেখেই ভীত হয়ে পড়েছ,কেবলতো কলির সন্ধ্যা।
ক-অক্ষর গোমাংস = (বর্ণ পরিচয়হীন মূর্খ) – অনেক ধন-সম্পদ থাকলে কি হবে, সে একেবারে ক-অক্ষর গোমাংস।
কলমের খোঁচা = (লিখে ক্ষতি করা) – সুদখোর মহাজনরা অনেক সময় কলমের খোঁচায় কৃষকদের সর্বসান্ত করে থাকে।
কলম পেষা = (একঘেয়ে কেরানির কাজ) – সারাজীবন শুধু কলম পিষেই কাটিয়ে দিলে, জীবনের স্বাদ কিছুই পেলে না।
কলকাঠি নাড়া = (গোপনে কু-পরামর্শ দেওয়া) – তমাল তার নিজের বুদ্ধিতে একাজ করছে না, কেউ না কেউ উপর থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে।
কথা চালা = (রটনা করা) – কথা চালার হলে অনেক মিথ্যা খবরও মুখরোচক সংবাদ হয়ে দাঁড়ায়।
কত ধানে কত চাল = (যথার্থ হিসাব-নিকাশ) – এখন গা করছো না, যখন সংসারের বোঝাটা ঘাড়ে পড়বে তখন বুখবে কত ধানে কত চাল।
কপাল ফেরা = (অবস্থার উন্নতি হওয়া) – ছেলেটা বিদেশ যাওয়ায় এতদিনে তাঁর কপাল ফিরেছে।
কান পাতলা = (সব কথায় বিশ্বাস করা) – কান পাতলা বন্ধুরা অনেক সময় বিপদের কারন হয়ে দাঁড়ায়।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব = (অমুলক বস্তু) – তোমার কথায় আমি মোটেই আগ্রহী নই, এতক্ষণ যা বললে তা সবই কাঁঠালের আমসত্ত্ব।
কড়ার ভিখারী = (নিঃস্ব ব্যক্তি) – মহাপরাক্রমশীল রাজা-বাদশারাও ভাগ্য দোষে একবারে কড়ার ভিখারীরে পরিণত হয়।
খ - বাগধারা
খইয়ের বন্ধনে পড়া = (মুস্কিলে পড়া) - মৃত বন্ধুর দুষ্ট প্রকৃতির ছেলেকে আশ্রয় দিয়ে খইয়ের বন্ধনে পড়েছি।
খাতির জমা = (নিরুদ্বিগ্ন) - অনেকদিন পর খাতির জমা আড্ডা মারলাম।
খাঁদা নাকে তিলক = (অশোভন সজ্জা) - হাসনা তোমার খাঁদা নাকের তিলক কেউ পছন্দ করবে না।
খাল কেটে কুমির আনা = (জেনে শুনে বিপদ ডাকা) - মীর জাফরকে প্রধান সেনাপতি করে নবাব সিরাজ খাল কেটে কুমির এনেছিলেন।
খাল কেটে কুমীর আনা = (স্বীয় দোষে বিপদে পড়া) - ওর মত বদমায়েশ লোককে স্থান দিয়ে আমি যেন খাল কেটে কুমীর এনেছি, ওর জন্যই আমাকে বিপদে পড়তে হল।
খিচুড়ি পাকানো = (জটিল করা) - রকি সহজ কথাকে খিচুড়ি পাকিয়ে উত্তর দেয়।
খোদার খাসি = (হৃষ্টপুষ্ট) - মালার ছেলে একেবারে খোদার খাসি, তাকে দিয়ে সব কাজ হবে না।
খুটে খাওয়া = (স্বাবলম্বী হওয়া) - বিধবা ছাগল পালন করেই এমন খুটে খাওয়া মানুষে পরিণত হয়েছে।
খন্ডকপালে = (দুর্ভাগ্য) - আমরা খন্ডকপালে মানুষ রে ভাই; এত সুখ কি আমাদের সয়?
খন্ডপ্রলয় = (তুমুল কান্ড) - গতকল্য রহিম ও করিমের মধ্যে একটা খন্ডপ্রলয় বেঁধে গেছে।
খড়ি উড়া = (খুস্কি ওঠা) - তৈল না দিয়ে মাথাটাকে খড়ি উড়া বানিয়ে রেখেছ।
খুঁড়িয়ে বড় হওয়া = (আসলে বড় নয়, গায়ের জোরে বড় হওয়া) - বড় লোকের ছেলের বাবুগিরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, গরীবের ছেলের বাবুগিরি করা খুঁড়িয়ে বড় হওয়ার মত।
খুড়িয়ে বড় হওয়া = (জোর করে বড় হওয়ার চেষ্টা) - চুল ধরতে যার মূল নেই সে চায় ‘খুড়িয়ে বড় হতে’।
খয়ের খাঁ = (চাটুকার) - রফিকের মতো খয়ের খাঁ লোক আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি।
খয়ের খাঁ = (ধামাধরা) - মীরজাফর ইংরেজদের খয়ের খাঁ হওয়ায় দেশবাসীর কাছে ঘৃণার পাত্র হয়েছেন।
গ - বাগধারা
গা ঢাকা = (আত্মগোপন) - পুলিশের ভয়ে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে।
গা ঢালা = (হতাশা) - চাকরিটা না পেয়ে বান্টি গা ঢেলে দিয়েছে।
গা তোলা = (উঠা) - এখন গা তুলুন, ট্রেনের সময় হয়েছে।
গা-করা = (মনোযোগ দেওয়া) - পরের কাজ হলেও গা-করা দরকার নচেৎ সব পন্ডশ্রম হবে।
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল = (প্রাপ্তির আগেই কাজের আয়োজন) - ভর্তির জন্য তদবির অথচ পরীক্ষার ফল বের হয়নি গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
গাছে তুলে মই সরানো = (কাজে নামিয়ে সরে পড়া) - বন্ধুরা স্কুল করার কাজে নামিয়ে পালিয়েছে, এ যে দেখছি গাছে তুলে মই সরানো।
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি = (কাজ না করে ফল চাওয়া) - কাজ না করেই টাকা চাও এ যে দেখছি গাছে না উঠতেই এক কাঁদি।
গাছেরও খায় তলারও কুড়ায় = (সব আত্মসাৎ করা) - সরকারি চাকরিতে পদস্থ কোন কোন ব্যক্তি গাছেরও খান, তলারও কুড়ান।
গায়ে আঁচ না লাগা = (কোন ক্ষতি না হওয়া) - বোনের বিয়েতে ভাইয়েরা সব করল, বাবার গায়ে এতটুকু আঁচ লাগতে দেয়নি।
গায়ে কাঁটা দেওয়া = (রোমাঞ্চিত হওয়া) - নির্জনে গোরস্থানে দুপুর রাতে যাবার কথা শুনে দুর্দান্ত জলিলের গায়ে কাটা দিয়ে উঠল।
গায়ে কাঁটা দেয়া = (রোমাঞ্চ হওয়া) - ভূতের গল্প শুনলে অনেকের গায়ে কাঁটা দেয়।
গায়ে গায়ে শোধ = (দেনা না দেয়া-ও প্রাপ্য না লওয়া অথচ দেনা পাওনার শোধবোধ) - তুমি আমার নিকট একশত টাকা পাবে, তা তোমার খোরাকি বাবদ খরচ করে গায়ে গায়ে শোধ দিতে চাই।
গায়ে পড়া = (অযাচিত) - মজনুর গাছে পড়ে ঝগড়া করার স্বভাবটা গেল না।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো = (অন্তহীন লোক) - পরীক্ষায় ফেল করে গায়ে ফুঁদিয়ে বেড়াচ্ছ, ভায়া তোমার কি ভাবনার অন্ত নেই?
গায়ে মানে না আপনি মোড়ল = (গ্রামবাসী না মানলেও নিজেই নিজেকে কর্তা বলে জাহির করা) - তুমি বাপু ফপর দালালী করছে কেন-গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল হয়ে বসেছ দেখছি।
গায়ের ঝাল ঝাড়া = (শোধ লওয়া) - আর কিছু পারি বা না পারি, কুকথায় পঞ্চমুখ হয়ে গায়ের ঝাল ঝাড়তে পারব।
গোঁফ খেজুরে = (অলস) - তোমার গোঁফ খেজুরে লোক দিয়ে মহৎ কাজ সম্ভব নয়।
গোঁয়ারগোবিন্দ = (কান্ডজ্ঞানহীন মানুষ) - গোঁয়ারগোবিন্দের মত কাজ করলে ঠকতে হয়।
গো বেচারা = (নিরীহ) - গো বেচারা সেজে বসে থাকলে জীবনে কষ্ট পেতে হয়।
গোকুলের ষাঁড় = (বেকার, ভবঘুরে) - চৌধুরী সাহেবের মেঝো ছেলেটি লেখাপড়াও শিখেনি, অপর কোন কাজকর্মও করে না, গোকুলের ষাঁড় হয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।
গোকুলের ষাঁড় = (স্বেচ্ছাচারী) - মহল্লায়-মহল্লায় আজকাল বহু যুবককে গোকুলের ষাঁড়ের মতো ঘুরতে দেখা যায়।
গো-বৈদ্য = (হাতুড়ে) - ইসলাম সাহেবের মেয়ে এবারে এক গো-বৈদ্যের হাতে পড়ে মরতে বসেছিল।
গোবর গণেশ = (অকর্মণ্য) - বড়লোকের ছেলেদের রোজগার করে খেতে হয় না বলে তারা প্রায়ই গোবর গণেশ হয়ে থাকে।
গোবর গনেশ = (মূর্খ) - সে একটা গোবর গনেশ। দুনিয়ার কোনো খোঁজ রাখে না।
গোবরে পদ্মফুল = (নিচকলে মহৎলোক) - রহিম সাহেবের মতো গোবরে পদ্মফুল খুব কম দেখা যায়।
গো-মূর্খ = (নিরেট মূর্খ) - হারিম সাহেবের গো-মূর্খ ছেলেটার এমন রূপসী গুণবতী বৌ জুটলো, একেই বলে ভাগ্য।
গোল্লায় যাওয়া = (নষ্ট হওয়া) - বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ছেলেটা গোল্লায় গিয়েছে।
গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা = (জ্ঞাতসারে ক্ষতি করে পর সংশোধনের প্রয়াস) - ছাত্র হয়ে পরীক্ষার হলে ওস্তাদের গায়ে হাত দিয়ে পরে ক্ষমা প্রার্থনা কর। এ যে দেখছি গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা।
গোড়ায় গলদ = (শুরুতেই ভুল) - জমি না কিনে সার কিনেছ, এ দেখছি গোড়ায় গলদ।
গোয়ার গোবিন্দ = (কা-জ্ঞানহীন) - তাজের মতো গোয়ার গোবিন্দ লোক দিয়ে কোন কাজই আশা করা যায় না।
গৌরী সেনের টাকা = (বেহিসেবি অর্থ) - গৌরী সেনের টাকা দু’হাতে খরচ করেও শেষ করা যায় না।
গৌরচন্দ্রিকা = (ভূমিকা) - গৌরচন্দ্রিকার দরকার নেই, আসল কথা বল।
গৌরীসেনের টাকা = (অফুরন্ত অর্থ) - ভায়া, একি গৌরীসেনের টাকা পেয়েছ যে, এক ধারছে খরচ করছ, রেখে ঢেকে খরচ কর।
গড্ডালিকা প্রবাহ = (অন্ধ অনুকরণ) - গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চললে জীবনে উন্নতির কোন আশা নেই।
গণেশ উল্টানো = (সমূলে উঠে যাওয়া) - বেহিসেবি লোকটি মূলধন শেষ করে ব্যবসায় গণেশ উল্টাল।
গগদাই লস্করী চাল = (মন্থর গতি) - গদাই লস্করী চাল না ছাড়লে ১০টার ট্রেন ধরা যাবে না।
গন্ধে টের পাওয়া = (অনুমানে জানা) - তোমাদের বাড়িতে যে আজ বিশাল আয়োজন হবে তা আমি গন্ধেই টের পেয়েছি।
গন্ধমাদন বয়ে আনা = (অবাস্তব বিষয়ের অবতারণা) - প্রশ্নে চেয়েছে কি আর তুমি গল্পটা আগাগোড়া লিখে একেবারে গন্ধমাদন বয়ে এনেছ।
গভীর জলের মাছ = (খুব চতুর ব্যক্তি) - খালেক সাহেবের মতো গভীর জলের মাছকে চেনা কঠিন।
গরু খোঁজা = (তন্ন তন্ন করে খোঁজা) - হারানো ছেলেটিকে গরু খোঁজা করার পর অবশেষে পাওয়া গেল।
গুরু মারা বিদ্যা = (যার কাছে শিক্ষা তাকে পরাজিত করার কৌশল) - ছাত্র হয়ে শিক্ষকের ভুল ধরা-এ গুরু মারা বিদ্যা শিখলে কোথায়?
গরু মেরে জুতা দান = (বড় ক্ষতি করে সামান্য পূরণ) - বিধবার সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তাকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে-এ যেন গরু মেরে জুতা দান।
গরিবের ঘোড়া রোগ = (অসম্ভব আশা পোষণ করা) - ঠিক মতো খেতে পায় না, কিনতে চায় মটর গাড়ি, এ যেন গরিবের ঘোড়া রোগ।
গর্দভ রাগিণী = (মাধুর্যহীন চিৎকার) - প্রতিদিন তোমার গর্দভ রাগিণী শুনতে ভালো লাগে না। একটু রেহাই দেও।
গলগ্রহ = (পরের বোঝা হয়ে থাকা) - অনেক দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি পুত্র ও পুত্রবধূর গলগ্রহ হয়ে রয়েছে।
গলায় গামছা দেয়া = (অপমান করা) - এই মাসে পাওনা টাকা না পেলে গলায় গামছা দিয়ে আদায় করব।
গলায় গলায় = (গভীর মিল) - দুই বন্ধুর গলায় গলায় ভাব থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কে চিড় ধরেছে।
গলায় গলায় ভাব = (নিবিড় বন্ধুত্ব) - শাকিলের সাথে শহিদের গলায় গলায় ভাব থাকায় এখনও বন্ধুত্ব অটুট আছে।
গড়িমসি করা = (দীর্ঘসূত্রিতা) - কোন কাজে গড়িমসি করলে ফলাফল ভালো হয় না।
গুড়ে বালি = (আশায় নিরাশ হওয়া) - আজাদের পিছনে ঘুরে টাকা পাওয়ার আশা গুড়ে বালি ছাড়া কিছুই নয়।
ঘ - বাগধারা
ঘুঘু চরানো = (সর্বনাশ করা) - চেয়ারম্যানের সাথে শত্রুতা আরম্ভ করেছ জান না, তোমার ভিটেতে ঘুঘু চরিয়ে ছাড়বে।
ঘা খাওয়া = (আঘাত পাওয়া) - তোমার ব্যবহারে আমি ঘা খেয়েছি।
ঘা খাওয়া = (দুঃখ পাওয়া) - বৃদ্ধা জীবনে অনেক ঘা খেয়ে শেষে মারা গেল।
ঘাঁটিঘাঁটি করা = (বাহুল্য হস্তক্ষেপ) - করিমের ঘাঁটিঘাঁটি করার স্বভাবটা গেল না।
ঘাটের মরা = (অতি বৃদ্ধ) - বৃদ্ধ খরচ যোগাতে না পেরে ঘাটের মড়ার সাথে মেয়েকে বিয়ে দিল।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া = (বিপদ কেটে যাওয়া) - ছাত্রটির জেল হওয়ার কথা, কিন্তু মহানুভব জজ সাহেব তাকে মুক্তি দেওয়ায় শিক্ষকদের ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ালো।
ঘোল খাওয়ানো = (জব্দ করা) - শুভ খুব বুদ্ধিমান, সহজে তোমাকে ঘোল খাওয়াতে পারে।
ঘোড় ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া = (পদ্ধতির ব্যতিক্রম করা) - বাবাকে অসম্মান করে চাচাকে সম্মান দেখানো এ যেন ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া।
ঘোড়া ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাওয়া = (উপরওয়ালাকে ডিঙ্গাইয়া স্বার্থ হাসিল করা) - দরখাস্ত, অফিসের বড় সাহেবের হাতে দিয়ে পাঠাও ঘোড়া ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাওয়ার চেষ্টা করো না।
ঘোড়া দেখে খোঁড়া হওয়া = (শ্রমসাধ্যকার্যে সাহায্যকারী পেলে অলস হওয়া) - ওহে শরীফ, দপ্তরে নতুন লোকের নিয়াগ হয়েছে বলে তোমার ঘোড়া দেখে খোঁড়া হওয়া চলবে না।
ঘোড়া রোগ = (সাধ্যের অতিরিক্ত সাধ) - পকেটে এক টাকা নেই, অথচ দালান বানাবে, এ যে ঘোড়া রোগ।
ঘোড়ার ঘাস কাটা = (অর্থহীন কাজ করা) - বেকারদের ঘোড়ার ঘাস কাটা ছাড়া আর কি করার আছে?
ঘোড়ার ডিম = (অলীক পদার্থ) - লোকটা কেমন হাড় কিপটে, তার কাছে যাচ্ছ টাকা ধার চাইতে, ঘোড়ার ডিম পাবে।
ঘটিরাম = (অপদার্থ) - অফিস-আদালত আজকাল ঘটিরামে ছেয়ে গেছে, কাজ হবে কিভাবে?
ঘর থাকতে বাবুই ভিজা = (সুযোগ থাকতে কষ্ট) - গফুরের প্রচুর টাকা আছে অথচ খরচ করে না- এ যেন ঘর থাকতে বাবুই ভিজা।
ঘর ভাঙা = (ঐক্য নষ্ট করা) - সমাজে ঘর ভাঙা লোকের অভাব নেই।
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো = (নিজ খরচে পরের বেগার খাটা) - বোকা লোকেরাই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়।
ঘরের ঢেঁকি কুমীর = (অপদার্থ খন্ড মার্কা) - ওতো একটা ঘরের ঢেঁকি কুমীর, কোন কর্ম নেই, খায় দায় আর ঘুমায়।
ঘরভেদী বিভীষণ = (যে গৃহবিবাহ বাধায়) - আজিজ, ওর জন্য তুমি ত ওকালতি করছ, কিন্তু জানো, তরু একজন ঘরভেদী বিভীষণ।
চ - বাগধারা
চক্ষু চড়ক গাছ = (বিস্ময়ে হতবুদ্ধি) - চোখের সামনে এমন একটা ভৌতিক কান্ড দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ হল।
চক্ষুঃশূল = (অন্তর দিয়ে যাকে সহ্য করা যায় না) - পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে আমি তার চক্ষুঃশূল হয়ে উঠেছি।
চক্ষুদান করা = (চুরি করা) - পকেটমার আমার পকেট থেকে একশত টাকা চক্ষুদান করেছে।
চক্ষুদান করা = (চুরি) - পকেটমার আমার কলমটা চক্ষুদান করে নিয়ে গেল।
চক্ষুলজ্জা = (সংকোচ) - চক্ষু লজ্জা থাকলে নির্মল এমন অন্যায় কাজ করতে পারত না।
চক্ষুশূল = (পীড়াদায়ক) - এমএ পাস করে চাকরি জোটাতে পারে না, তাই রহিম বাপ-মায়ের চক্ষুশূল।
চাচা আপন প্রাণ বাঁচা = (আগে নিজের জীবন রক্ষা করা) - বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মীয়-কুটুম ছেড়ে অনেক চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে চলে যায়।
চাটিবাটি গুটান = (বাস্তুত্যাগ করা) - চাটিবাটি গুটিয়ে চলে যাচ্ছ যাও; বলে রাখলাম, সেখানে না খেয়ে মরতে হবে বাপু।
চাঁদের হাট = (সুখের সংসার) - আরিফের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে চাঁদের হাট বসিয়েছে।
চামচিকের লাথি = (নগণ্য ব্যক্তির কটূক্তি) - সভাপতির পদ ছেড়ে দেয়ায় শামীম সাহেবকে এখন চামচিকেও লাথি মেরে যাচ্ছে।
চাল নেই চুলো নেই = (নিঃস্ব) - হামিমের চাল নেই চুলো নেই, অথচ বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়।
চালমারা = (মিথ্যা বাহাদুরি করা) - নিতাই যে চালমারে ওর সাথে কোন বিষয়ে পারা ভার।
চিচিং ফাঁক = (স্বার্থ লাভের সহজ পথ) - আলি বাবার মতো চিচিং ফাঁক বললেই সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি পাওয়া যায় না।
চিনির পুতুল = (অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত) - ধনীর দুলালেরা চিনির পুতুলই হয়।
চিনির বলদ = (নিষ্ফল পরিশ্রম) - সারা জীবন চিনির বলদের মত খাটলে, কিন্তু উন্নতি করতে পারলে না।
চিনে জোঁক = (নাছোড়বান্দা) - বড় সাহেবের মন রক্ষার জন্য ফারহান চিনে জোঁকের মত লেগে রইল।
চোখ কানা বোঁজা = (নির্বিকারভাবে সহ্য করা) - শিক্ষকের গালমন্দ ছাত্ররা চোখ কান বুঁজে সহ্য করে।
চোখ কপালে তোলা = (বিস্মিত হওয়া) - ছোটদের বড় কথা শুনে চোখ কপালে উঠল।
চোখ টাটানো = (ঈর্ষা করা) - পরের ভালো দেখে চোখ টাটানো ভালো নয়।
চোখ পাকানো = (রাগ প্রকাশ) - শ্রেণি শিক্ষকের চোখ পাকানো দেখে সবাই ভয় পেয়েছিল।
চোখ বোজা = (মারা যাওয়া) - দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গফুরের নানা চোখ বুজল।
চোখ বুঝে থাকা = (ইচ্ছা করে না দেখা) - তোমার সামনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল অথচ তুমি চোখ বুঝে থাকলে?
চোখ বুলানো = (দেখা) - পরীক্ষার আগে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো একবার চোখ বুলানো উচিত।
চোখে অন্ধকার দেখা = (নিরাশ হওয়া) - ব্যাংক ফেল হওয়ায় রহমান চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল।
চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো = (বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ) - স্যার ছাত্রদের ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন।
চোখে ধোঁয়া দেখা = (হতভম্ব হওয়া) - মামলা মকদ্দমায় হেরে তালুকদার সাহেব চোখে ধোঁয়া দেখতে লাগলেন।
চোখে ধূলি দেওয়া = (প্রতারণা করা) - আমার চোখে ধূলি দিতে চাও, এতখানি বুদ্ধি এখনও হয়নি।
চোখে সরষে ফুল দেখা = (হতবুদ্ধি) - প্রশ্নপত্র কিছুই কমন আসেনি দেখে ছাত্রটি চোখে সরষে ফুল দেখছে।
চোখের নেশা = (রূপের মোহ) - সুন্দরবনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে আমার চোখে নেশা লেগেছে।
চোখের পর্দা বা চামড়া = (লজ্জা) - চোখের পর্দা থাকলে সে আমার সাথে প্রবঞ্চনা করত না।
চোখের বালি = (চক্ষুশূল) - সতীনের মেয়েটি নতুন বৌয়ের যেন চোখের বালি, একেবারে দেখতে পারে না ওকে।
চোখের মাথা খাওয়া = (কানা বা অন্ধ) - তুমি কি চোখের মাথা খেয়েছ যে, ভূগোল আনতে গিয়ে ইতিহাস এনেছ।
চোখের মণি = (অত্যন্ত প্রিয় বস্তু) - বিধবা মায়ের একমাত্র ছেলেটি তার চোখের মণি।
চোখের মণি = (অত্যন্ত প্রিয়) - একমাত্র মেয়ে রিশা মা-বাবার চোখের মণি।
চোরাবালি = (প্রচ্ছন্ন বিপদ) - ও-পথে যেও না, চোরাবালিতে পড়বে।
চোরের মায়ের কান্না = (যে বেদনা কাউকে জানানো যায় না) - ছেলেকে চিরদিন সদুপদেশ দাওনি, পরিণামে তোমাকে চোরের মায়ের কান্না কাঁদতেই হবে।
চুনকালি দেয়া = (কলঙ্ক) - ভদ্র ও নম্র মেয়েটির নামে এভাবে চুনকালি দেয়া ঠিক হয়নি।
চম্পট দেয়া = (পলায়ন) - সুযোগ বুঝে চোরটি চম্পট দিল।
চরিয়ে খাওয়া = (অপরকে ইচ্ছামত চালিয়ে অর্থোপার্জন) - উকিলরা মানুষ চরিয়ে খায়।
চর্বিত চর্বন = (পুনরাবৃত্তি) - হাফিজ স্যারের প্রতিদিন চর্বিত চর্বন আর ভালো লাগে না।
চুল পাকানো = (অভিজ্ঞতা অর্জন) - মাস্টারী করে চুল পাকালাম, তুমি এসেছ ভুল ধরতে।
চুলোয় যাওয়া = (ধ্বংস) - বখাটে ছেলেদের সঙ্গে এভাবে ঘোরাফেরা করলে লেখাপড়া চুলোয় যাবে।
চশমখোর = (চক্ষুলজ্জাহীন) - প্রকৃত বন্ধু বিপদের সময় চশমখোরের মতো পালিয়ে যায় না।
চষে বেড়ানো = (বহুবার গমনাগমন) - সমস্ত শহর চষে বেড়িয়েও তোমার খোঁজ পেলাম না।
চূড়ার উপর ময়ূর পাখা = (ভালোর উপর ভাল) - করিম সাহেবের জামাতা যেমন রূপবান তেমনি বিদ্বান, যেন চূড়ার উপর ময়ূর পাখা।
ছ- বাগধারা
ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা = (নগণ্য স্বার্থে দুর্নাম অর্জন) - এই দাগী চোরকে পুলিশের হাতে না দিয়ে স্বহস্তে শিক্ষা দিলে, ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করাই হবে।
ছ’কড়া ন’কড়া = (সস্তা, তুচ্ছ) - আমান কি তোমাকে ও আমাকে ছ’কড়া ন’কড়া মানুষ পেয়েছে?
ছক্কা পাঞ্জা করা = (বড় বড় কথা বলা) - নির্বাচনের পূর্বে সব প্রার্থীরাই ছক্কা পাঞ্জা করে।
ছাই চাপা আগুন = (প্রচ্ছন্ন যোগ্যতা) - করিমের ভিতর আমি ছাই চাপা আগুন দেখেছি।
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো = (ছোট কাজের জন্য অপদার্থ ব্যক্তি) - এই বুড়ো বয়সে আর কোথায় যাব মা ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো হয়ে থাকব।
ছা-পোষা = (পোষ্য ভারাক্রান্ত) - ছা-পোষা লোকটা সংসারের চিন্তায় অকালে প্রাণ হারালো।
ছায়া মাড়ানো = (কাছে যাওয়া) - তুমি এখন কোথায় থাক, অনেকদিন হলো আমাদের বাড়ির ছায়া মাড়াওনি।
ছিচ কাঁদুনে = (অল্পতেই কাঁদে এমন) - পারভীনের মত ছিচ কাঁদুনে মেয়ে এ সংসারে বিরল।
ছিনিমিনি খেলা = (অপব্যয় করা) - বড়লোকের ছেলে তো, টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে বাধে না।
ছুঁচ হয়ে ঢোকে, ফাল হয়ে বেরোয় = (সামান্য রূপে প্রবেশ, পরে বড় অনিষ্ট সাধন করে প্রস্থান) - অল্প টাকার মায়নার চাকরিতে ঢুকে কালক্রমে অফিসের বড় সাহেবরূপে কয়েক লক্ষ টাকা চক্ষুদান দিয়ে অফিসটি যখন লালবাতি জ্বালাল তখনি বুঝা গেল যে ছুঁচ হয়ে ঢোকে, ফাল হয়ে বেরোয়।
ছেলের হাতের মোয়া = (অতি সহজ ব্যাপার) - পরীক্ষায় পাস করতে হলে রীতিমত পরিশ্রম করতে হয়, এ ছেলের হাতের মোয়া নয়।
ছেলের হাতের মোয়া = (সহজ কিছু) - আজকাল সরকারি চাকরি পাওয়া ছেলের হাতের মোয়া নয়।
ছেঁড়া চুলে খোপা বাঁধা = (বৃথা চেষ্টা) - সামান্যই আয় সংসারে, তাই ছেঁড়া চুলে খোপা বাঁধা চলে না, ওকে চাকরিতে দিয়েছি।
জ - বাগধারা
জগদ্দল পাথর = (গুরুভার) - সে আমার উপর দায়িত্বের জগদ্দল পাথর চাপিয়ে নিশ্চিত হয়ে আছে।
জলে কুমীর ডাঙ্গায় বাঘ = (উভয়সঙ্কট) - আবুল হোসেন বড় বেকায়দায় পড়েছিল, একদিকে মাতৃআজ্ঞা লঙ্ঘনের ফলে উদ্ভূত পাপ অন্যদিকে মাতৃআজ্ঞা অমান্য করার জন্য পিতৃাদেশ, কোন দিকে যাবে ও জলে কুমীর ডাঙ্গায় বাঘ।
জগা-খিচুঁড়ি = (বিশৃঙ্খলা) - বাক্সের মধ্যে বই-পত্তর কাগজ সব জগা-খিঁচুড়ি করে রেখেছে।
জিলাপীর প্যাঁচ = (কূটবুদ্ধি) - যার পেটে এমন জিলাপীর প্যাঁচ, তাকে সব কথা আমার বলা উচিত হয়নি।
জিব কাটা = (লজ্জায় দাঁত দিয়ে জিহ্বা চেপে ধরা) - বিবাহ মহফিলে বরের পিতা সবার সামনে পণের টাকার উল্লেখে বর জিব কাটলো।
জাহান্নামে যাওয়া = (গোল্লায় যাওয়া) - টাকা চুরি করে এমন ভালমানুষী দেখানো হচ্ছে, জাহান্নামে যাও তুমি।
জগাখিচুড়ি = (অব্যবস্থা) - কাঞ্চন কাজের শুরুতেই একেবারে জাগাখিচুড়ি করে ফেলেছে?
জগদ্দল পাথর = (অত্যধিক চাপ) - নিরীহ অফিস সহকারীকে এখন কাজের জগদ্দল পাথর বইতে হচ্ছে।
জলাঞ্চলি দেয়া = (বিসর্জন দেয়া) - স্বাধীনতার জন্য অনেক মানুষ তাদের প্রাণ জলাঞ্জলি দিয়েছে।
জিভে পানি আসা = (লোভ) - টক দেখলে সবার জিভে পানি এসে যায়।
জিভ বেরিয়ে পড়া = (ক্লেশ বোধ করা) - প্রচণ্ড গরমে কাজ করতে করতে অনেকের জিভ বেরিয়ে যায়।
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ = (উভয় সংকট) - একদিকে কর্তৃপক্ষের শাস্তির ভয় অন্যদিকে সমিতির হুক্কার জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, যাই কোন দিকে?
জাল পাতা = (ফাঁদ পাতা) - জাল পাতলেই সব সময় শিকার ধরা পড়ে না।
জাল গোটানো = (কর্মক্ষেত্র সংকুচিত করা) - অবসরে যাবেন বলে প্রদীপ কুমার তার জাল গুটিয়ে নিয়েছে।
জিলিপির প্যাঁচ = (অত্যন্ত খারাপ বুদ্ধি) - সমাজে এখন জিলিপির প্যাঁচ লোকের অভাব নেই।
ঝ - বাগধারা
ঝাঁকের কই = (একই দলের) - সবুরকে চিন না, স্বার্থের কারণে আজ সে এ রকম করছে, কাজ ফুরালে ঝাঁকের কই ঝাঁকেই ফিরে যাবে।
ঝাল ঝাড়া = (আক্রোশ মিটানো) - একটু ভুলের জন্যে জাহিদের উপর অফিসের বস ঝাল ঝাড়লেন।
ঝিকে মেরে বৌকে শিখান = (আভাসে শিক্ষা) - ভদ্রলোক ঝিকে মেরে তাঁর আধুনিকতা বৌকে শেখাতে চেষ্টা করলেন।
ঝোপ বুঝে কোপ মারা = (অবস্থা বুঝে সুযোগ গ্রহণ) - ইরাম ঝোপ কুঝে কোপ মারতে পারনি বলেই আজ তোমার এমন দুর্দশা।
ঝড়ো কাক = (বিপর্যস্ত) - পরীক্ষায় ফেল করায় রিন্টু ঝড়ো কাক হয়ে বাসায় ফিরল।
ট - বাগধারা
টই টুম্বুর = (ভরপুর) - বর্ষার পানিতে নদীটি টই টুম্বুর হয়ে উঠেছে।
টক্কর দেওয়া = (পাল্লা দেওয়া) - সামান্য কেরানী হয়ে বড় সাহেবের সঙ্গে টক্কর দিতে যেও না।
টাকার কুমির = (ধনী) - অসৎ উপায়ে টাকার কুমির হওয়া খুব কঠিন নয়।
টাকার গরম = (সম্পদের অহংকার) - টাকার গরমে চৌধুরী সাহেবের কাছে কথা বলা যায় না।
টাল সামলানো = (বিপদ সামলানো) - অনেক কষ্টে টাল সামলিয়েছি, আর কি আমি বখরায় ব্যবসায় করি।
টায়ে টায়ে = (কোন রকম) - মিশু টায়ে টায়ে পাস করেছে।
টীকা ভাষ্য = (দীর্ঘ আলোচনা) - প্রত্যেকটি আলোচনার টীকা-ভাষ্যের প্রয়োজন কি, এতেই চলবে।
টেক্কা দেয়া = (পাল্লা দেয়া) - গরিব হয়ে বড়লোকদের সাথে টেক্কা দেয়া ঠিক নয়।
টেঁকে গোঁজো = (সহজে কাবু করা) - মোড়ল অমন পাঁচটা মাস্তানকে টেঁকে গুঁজতে পারে।
টো টো করা = (লক্ষ্য হীনভাবে হেঁটে বেড়ানো) - সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ালে পরীক্ষায় ফেল করবে।
টোপ গেলা = (কৌশলে রাজি হওয়া) - দিনুকে অনেক চেষ্টায় টোপ গেলানো হয়েছে, এবার খেলা জমবে।
টোপ ফেলা = (ফাঁদ পাতা) - আবুল টোপ ফেলে আজকে অনেকগুলো মাছ ধরেছে।
ট্যাঁক ভারী করা = (অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন) - দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়ে শামীম ট্যাঁক ভারী করেছে।
টনক নড়া = (সচেতন হওয়া) - পরীক্ষায় ফেল করে মানিকের এবার টনক নড়ালো।
ঠ - বাগধারা
ঠাণ্ডা লড়াই = (গোপনে বিরোধিতা) - এখন ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগ-মুখে মধু, পেটে বিষ।
ঠাট বজায় রাখা = (অভাব চেপে রাখা) - আসাদের পেটে ভাত না থাকলে কি হবে, ঠাট বজায় রেখে চলে।
ঠারে ঠুরে = (ইশারায়) - শিক্ষা সফরের ব্যাপারে আমি ওকে ঠারে ঠুরে বুঝিয়ে দিয়েছি কি করতে হবে।
ঠোঁট কাটা = (স্পষ্টভাষী) - এই এলাকায় শফিক সাহেবের মত ঠোঁট কাটা আর দ্বিতীয়টি নেই।
ঠোঁট ফুলানো = (অভিমান করা) - মেয়েদের ঠোঁট ফুলানোর স্বভাব থাকবেই।
ঠোঁট সেলাই করে থাকা = (নির্বাক) - সন্ত্রাসীদের ভয়ে সবাই ঠোঁট সেলাই করে বসে আছে।
ঠেলার নাম বাবাজী = (চাপে পড়ে কাবু হওয়া) - আবুল, তবে না বলেছিলে, দেনা শোধ করবে না-কেমন, দিতে হল তো; ঠেলার নাম বাবাজী।
ঠুঁটো জগন্নাথ = (অকর্মণ্য) - সারাদিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে তুমি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাচ্ছে।
ড - বাগধারা
ডাকাবুকো = (দুরন্ত) - কিহে বাপু, ডাকাবুকো খান সাহেবের ছেলে তুমি, এমন বোকা।
ডাকের সুন্দরী = (খুবই সুন্দরী) - তোমার মত ডাকের সুন্দরী দেখে ছেলেরা পাগল হবেই।
ডান হাতের ব্যাপার = (আহার ভোজন) - একটু অপেক্ষা কর ভাই, আমি চট করে ডান হাতের ব্যাপারটা সেরে নিই।
ডানাকাটা পরী = (অসাধারণ সুন্দরী) - মেয়ে তো নয় যেন, ডানাকাটা পরী।
ডামাডোল = (গোলযোগ) - যুদ্ধের ডামাডোলে লাখো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়।
ডিমে রোগা = (জন্ম হতে রোগা) - ডিমে রোগা ছেলেটি কোন কঠিন কাজ করতে পারে না।
ডুবে ডুবে জল খাওয়া = (গোপনে কাজ করা) - ডুবে ডুবে জল খেলেও সবাইকে কালক্রমে ধরা দিতে হয়।
ডুমুরের ফুল = (দুর্লভ বস্তু) - কি হে মান্নান, আজকাল ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে যে।
ঢ - বাগধারা
ঢু মারা = (খোঁজ করা) - তোমার দোকানে বেশ কয়েকবার ঢু মেরেও তোমাকে পেলাম না।
ঢাক ঢাক গুড়গুড় = (কপটতা) - কোর্টে সাক্ষ্য দেব তো ঢাক ঢাক গুড়গুড় করতে পারব না, সত্য কথা বলব।
ঢাকের কাঠি = (তোষামোদ) - কেরানী সাহেব বড় সাহেবের ঢাকের কাঠি।
ঢাকের বায়া = (অকেজো) - আমিনুল একাই কাজটি করেছে, তার বন্ধু আমিন ঢাকের বায়া।
ঢিমে তেতালা = (মৃদুগতি) - জলদি করো, ঢিমে তেতালায় কাজ করলে সব পন্ড হবে।
ঢেউ গনা = (বাজে কাজে সময় নষ্ট করা) - পড়াশুনা বাদ দিয়ে নদীর ঢেউ গুনে লাভ নেই।
ঢেঁকির কচকচি = (বিরক্তিকর কথা) - দেখ! তোমার ওসব ঢেঁকির কচকচি শুনে লাভ নেই।
ঢেঁকির কুমির = (অপদার্থ) - আজাদের মতো ঢেঁকির কুমির দিয়ে কোন কাজ হয় না।
ঢেলে সাজানো = (নতুন করে তৈরি) - মজিদ ও জমিলা তাদের সংসার ঢেলে সাজাতে চায়।
ঢলাঢলি = (কেলেঙ্কারি) - স্কুল-কলেজের সহশিক্ষা যদি ঢলাঢলির সৃষ্টি করে তাহলে অবশ্য পরিত্যাজ্য।
ত - বাগধারা
তক্কে তক্কে থাকা = (গোপনে সতর্ক থাকা) - মুক্তিযোদ্ধারা তক্কে তক্কে থেকেই যুদ্ধ করেছিলেন।
তাইরে নাইরে না = (বৃথা সময় নষ্ট করা) - তাইরে নাইরে না করে সময় কাটায়ে এখন বকুল চোখে সরষে ফুল দেখছে।
তাক লাগা = (আশ্চর্য হওয়া)- আট বছরের ছেলে জহির ওস্তাদী গান গেয়ে সভাস্থ সকল লোককে তাক লাগিয়ে দিল।
তাক লাগানো = (অবাক করা) - বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করে অপু সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
তামার বিষ = (অর্থের কু-প্রভাব) - রহিমের ছেলেটাকে তামার বিষই শেষ করলো।
তাল সামলানো = (শেষ রক্ষা)- বুঝে সুঝে কাজ কর, শেষে তাল সামলানো দায় হবে, বুঝলে?
তালকানা = (কাণ্ডজ্ঞানহীন) - বিপ্লবের মতো তালকানা লোকদের সাথে বন্ধুত্ব জমে না।
তালপাতার সেপাই = (অত্যন্ত দুর্বল) - তালপাতার সেপাই হয়ে সে ঐ বদমায়েশটার সাথে লাগতে গেল কেন?
তাসের ঘর = (ক্ষণস্থায়ী) - এ সংসার তাসের ঘর, কি নিয়ে আমরা বড়াই করি।
তিলকে তাল করা = (অতিরিক্ত করা)- ওর স্বভাই হল তিলকে তাল করা, ওর কথায় কোন গুরুত্ব দেবেন না।
তীর্থের কাক = (লোলুপ বা লোভী ব্যক্তি)- সে তীর্থের কাকের মত হা করে বসেছিল।
তেল বাড়া = (অহংকার)- তোর খুব তেল বেড়েছে দেখছি।
তেলা মাথায় তেল দেওয়া = (যার আছে তাকে আরো দেওয়া)- দুনিয়ার সবাই তেলা মাথায় তেল দেয়, গবীবের কেউ নেই।
তেলে বেগুনে জ্বলা = (রাগে উত্তেজিত হওয়া) - অফিসের বস সামান্য একটা বিষয়ে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।
তোলপাড় করা = (আলোড়ন সৃষ্টি করে) - সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়ে রবীন্দ্রনাথ তোলপাড় করে দিয়েছে।
ত্রাহি ত্রাহি = (পরিত্রাণ কর বলে চিৎকার)- নদীতে প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়ে নৌকারোহিগণ এাহি এাহি ডাক ছাড়ল।
তুলাধুনা করা = (দুর্দশাগ্রস্ত করা) - দুই বন্ধু মিলে মুন্নাকে মেরে তুলাধুনা করেছে।
তুলসীবনের বাঘ = (ভণ্ড) - মুন্নাকে ভালো মনে কর? সে তুলসীবনের বাঘ।
তুষের আগুন = (অন্তরের গোপন জ্বালা) - চোখের সামনে স্বামীকে নষ্ট হতে দেখে বউটা তুষের আগুনে পুড়ছে।
তুড়ি দেয়া = (অবজ্ঞা করা) - আমার কথাটাকে এভাবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া ঠিক হয়নি।
তড়িঘড়ি = (দ্রুত) - অভি এত তড়িঘড়ি করে কোথায় যাচ্ছ?
থ - বাগধারা
থ হওয়া = (স্তম্ভিত হওয়া) - এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পাওয়ার খবর শুনে শামীম থ হয়ে গেল।
থ’হয়ে যাওয়া = (কিংবর্তব্য বিমূঢ় হওয়া)- কি কথার ঢং, এতটুকু ছেলে না তার কথা শুনে থ’হয়ে গেলাম।
থই থই করা = (পরিপূর্ণ) - বর্ষায় আমাদের চারপাশ পানিতে থই থই করছে।
থই পাওয়া = (তলা পাওয়া) - দিনার মতো কূটবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের থই পাওয়া কঠিন।
থাবাথুবি দিয়ে রাখা = (ভুলিয়ে রাখা) - ক্রন্দনরত বালকটাকে জননী থাবাথুবি দিয়ে রাখলেন।
থোঁতা মুখ ভোঁতা হওয়া = (বড় মুখ ছোট হওয়া) - আঃ এত দেমাক কিসের জন্য, ছেলে যা কেলেঙ্কারি করেছে তাতে তোমার থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়েছে টের পাওনা?
থৈ পাওয়া = (সীমা পাওয়া) - এত করলাম অথচ তোমাকে খুশী করা গেল না, তোমার মনে থৈ পাওয়া কি আমার সাধ্যি?
থোড়াই কেয়ার করা = (কিছুমাত্র গ্রাহ্য না করা) - ব্রাজিলের ফুটবলাররা বাংলাদেশি খেলোয়ারদের থোড়াই কেয়ার করে।
থতমত খাওয়া = (কি করা উচিত বুঝতে না পারা) - হঠাৎ প্রধান শিক্ষক ক্লাসে এসে পড়ায় ছাত্ররা থতমত খেল।
দ - বাগধারা
দু’কান কাটা = (বেহায়া)- জেল খেটে খেটে এই পাকা চোরটি দু’কান কাটা হয়ে পড়ছে।
দু’চোখের বিষ = (পরম শত্রু) - ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সব সময়েই দুই দেশের দু’চোখের বিষ।
দু’মুখো সাপ = (দুদিক থেকে ক্ষতিকর) - মানুষের দু’মুখো সাপের নীতি পরিহার করা উচিত।
দু’হাতে খরচ করা = (বেহিসেবি) - মেয়ের বিয়েতে দীপা দুহাতে টাকা খরচ করেছে।
দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার = (বিরাট সমারোহ)- চৌধুরী বাড়িতে বিবাহের হৈ চৈ পড়েছে, যেন দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার।
দাঁও মারা = (মোটা লাভ করা)- সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ী এক দাঁও মারার চেষ্টা করছে।
দা-কুমড়া = (শত্রুতা) - দু’ভাইয়ের দা-কুমড়া সম্পর্ক আমৃত্যুই থেকে গেল।
দাঁতে কুটা কাটা = (বিনীত হওয়া)- শিষ্য ওস্তাদের কাছে দাঁতে কুটা কেটে উপস্থিত হল।
দিন থাকতে = (উপযুক্ত সময়ে) - দিন থাকতে হাঁটো, বয়স থাকতে খাটো।
দিন ফুরানো = (আয়ু শেষ হওয়া) - দিন ফুরানোর আগেই পরকালের জন্য ভালো কাজ করে নাও।
দিনকে রাত করা = (সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করা) - করিম যুক্তি দিয়ে দিনকে রাত করতে চায়।
দেঁতো হাসি = (কৃত্রিম হাসি) - বিরু কথাটা শুনে দেঁতো হাসি হাসলেন।
দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা = (আদর করে শত্রু পালা) - নিঃসন্তান সৎমা বুঝতে পারেনি তার সৎপুত্র দুধ কলা দিয়ে পোষা সাপ হয়ে দাঁড়াবে।
দুধে ভাতে থাকা = (সুখে থাকা) - আমাদের দেশের সন্তানেরা যেন থাকে দুধে ভাতে।
দুধের ছেলে = (কচি ছেলে) - এই টুকুন দুধের ছেলেকে দিয়ে সংসারের কাজ করানোটা ঠিক হয়নি।
দুধের মাছি = (সুসময়ের বন্ধু) - জীবনে দুধের মাছি অভাব হয় না।
দুধের সাধ ঘোলে মিটানো = (ভালোর অভাব মন্দ দিয়ে পূরণ) - দুধের সাধ কখনও ঘোলে মিটে না।
দন্তস্ফুট করা = (কঠিন বিষয়ে প্রবেশ)- অঙ্কটি এমনই দুরূহ যে সহজে দস্তস্ফুট করা গেল না।
দরকষাকষি = (দামাদামি করা) - দরকষাকষি করে যে-কোনো জিনিস কিনতে হয়।
দশের লাঠি একের বোঝা = (সকলে মিলে কাজ করলে সহজ, কিন্তু একজনের পক্ষে বোঝাস্বরূপ)- তোমরা দেশের মানুষ, কাজ করে যাও, কোন সমস্যাই কঠিন নয়, জানো তো, দশের লাঠি একের বোঝা।
দহরম মহরম = (নিবিড় সম্পর্ক) - ওদের দু’বন্ধুত্বে ছোটবেলা থেকেই বেশ দহরম মহরম।
ধ - বাগধারা
ধামা চাপা দেয়া = (গোপন করা) - পরীক্ষার রেজাল্টের খবর কি আর ধামা চাপা দেয়া যায়?
ধামা ধরা = (তোষামোদ করা)- অপরের ধামা ধরে যাদের দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করতে হয়, তাদের জীবনের আর কি মূল্য?
ধোলাই দেয়া = (প্রচন্ড- প্রহার করা) - চোরটাকে হাতে নাতে ধরে সবাই আচ্ছা মতো ধোলাই দিল।
ধরাকে সরা জ্ঞান করা = (অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা) - কুয়েত থেকে হঠাৎ পেট্রোডলার কামিয়ে মিজান ধরাকে সরা জ্ঞান করতে চাচ্ছে।
ধরি মাছ না ছুঁই পানি = (কৌশলে কার্যসিদ্ধি)- ধরি মান না ছুঁই পানি গোছের কাজ হেডমাস্টার সাহেবের অপছন্দ-কেননা খাঁটি মানুষ তিনি।
ধর্মের কল = (সত্য) - ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
ধর্মের ঢাক আপনি বাজে = (পাপ গোপন না থাকা)- দারোগা সাহেবের ঘুষ খাওয়ার কথা প্রকাশ পেলে সবাই বলাবলি করতে লাগল যে ধর্মের ঢাক আপনি বেজেছে।
ধর্মের ষাঁড় = (স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি)- বাপ মরেছে তবু সংসারের কোন চিন্তা নেই ওর, ও যেন এক ধর্মের ষাঁড়।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির = (ধার্মিক)- ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির আর কি; সারাজীবন মিথ্যার বেসাতি করল, আজ কি না সে সত্য কথা বলেছে।
ন - বাগধারা
নগদ নারায়ণ = (নগদ অর্থ) - ঘুষখোরেরা প্রতিদিনই নগদ নারায়ণ পেয়ে থাকে।
নাই দেওয়া = (আদর দেওয়া)- কুকুরকে নাই দিলে ঘাড়ে চড়ে।
নাক গলানো = (অনধিকার চর্চা) - অমিতের সব ব্যাপারে নাক গলানোর স্বভাবটা গেল না।
নাকে খৎ = (অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করা) - গ্রামবাসী চোরটাকে পিটিয়ে নাকে খৎ দিয়ে তাড়িয়ে দিল।
নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো = (নিশ্চিন্ত থাকা)- নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছ, পরীক্ষা এসে গেল যে।
নাকে মুখে গোঁজা = (দ্রুত আহার) - দেরিতে ঘুম থেকে উঠে ফারহানা নাকে মুখে গুজে ক্লাসে ছুটল।
নাগরদোলা = (জন্মমৃত্যু) - জীবনটাই একটা নাগরদোলা, একে অস্বীকার করার উপায় নাই।
নাছোড় বান্দা = (সহজে ছাড়ে না) - তোমার মত নাছোড় বান্দা আমি খুব কম দেখেছি।
নাটের গুরু = (মূল নায়ক) - নাটের গুরুরা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে।
নাম ডুবানো = (সম্মান বিসর্জন)- বাপের নাম ডুবিয়ো না হে, পাস করতে হবে।
নামকাটা সিপাই = (কর্মচ্যুতি ব্যক্তি)- রহমান সাহেবকে মানি লোক বলছ; সে তো এখন নামকাটা সিপাই, আড্ডা ও তাস পেটাই তার কাজ।
নাড়ি নক্ষত্র = (সব তথ্য) - শফিকের নাড়ি-নক্ষত্র আমার জানা।
নাড়ির টান = (আন্তরিক মমত্ববোধ) - জন্মভূমির প্রতি আমাদের প্রত্যেকের নাড়ির টান আছে।
নিজের কোলে ঝোল টানা = (চরম স্বার্থপরতা)- কেমন করে তুমি পরের দুঃখ বুঝবে, তুমি তো নিজের কোলে ঝোল টানতেই ব্যস্ত থাক হামেশা।
নিজের চরকায় তেল দেওয়া = (অন্যের কাজে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কাজে মন দেওয়া)- ও তো বড়লোকের ছেলে ওর দিকে নজর না দিয়ে তুমি নিজের চরকায় তেল দাও গে।
নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ = (নিজের ক্ষতি করে পরের ক্ষতি সাধন)- নিজের নাম কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতেই তিনি আনন্দ পান।
নিমক হারাম = (অকৃতজ্ঞ) - মমিন কখনও নিমক খেয়ে নিমক হারামি করবে না।
নিমরাজি = (প্রায় রাজি) - একাজে তার কোন মতই ছিল না, এখন নিমরাজি হয়েছে।
নেই আঁকড়া = (নাছোড় বান্দা)- তুমি দেখছি জোঁকের মত আমার গায়ে লেগে রয়েছ; এত বলছি ছাড়ো, কিন্তু ছাড়বে না, তুমি একটি নেই আঁকড়া লোক।
নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল = (একেবারে কিছু না থাকার চেয়ে অল্প কিছু থাকা ভাল)- একেবারে সংসার ফাঁকা; কারুর ছেলে নিয়ে মানুষ করো না, তবু তো নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।
নেক নজরে থাকা = (সুদৃষ্টি) - বড় সাহেবের নেক নজরে থাকলে উপকার আছে।
নেক নজরে পড়া = (সুদৃষ্টিতে পড়া)- প্রিন্সিপালের নেক নজরে পড়তে পারলেই হল, রফিক সাহেবকে আর পায় কে?
নদীকূলে বাস = (ভয়ের জায়গায় অবস্থান)- নদীকূলে বাস, ভাবনা বারমাস।
ননীর পুতুল = (শ্রমবিমুখ)- আহা, রোদের আঁচ সয় না, যেন ননীর পুতুল।
নরক গুলজার = (পাপীদের সমাবেশে আসর সরগরম)- ইসলাইলী সৈন্যরা প্যালেস্টাইনের উদ্বাস্তু নরনারীর উপর মেসিন গানের গুলী চালিয়ে নরক গুলজার করে তুলেছিল।
নয়-ছয় = (অপচয় করা) - মিঠুন পঞ্চাশ হাজার টাকা নয়-ছয় করে উড়িয়ে দিয়েছে।
প - বাগধারা
পই পই করে বলা = (বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়া) - পই পই করে বলার পরও তুমি কামালের বইটি আনতে পারলে না।
পুকুর চুরি = (বড় রকমের চুরি) - বড় সাহেব না থাকায় ম্যানেজার এবার ব্যবসায় পুকুর চুরি করেছে।
পগার পার = (পলায়ন করা) - পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ডাকাতটি পগার পার হয়েছে।
পাকা ধানে মই = (অনিষ্ট করা) - আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি যে তুমি আমার পাকা ধানে মই দিলে।
পাত্তাড়ি গুটান = (দ্রব্যসামগ্রী গুছিয়ে বাঁধা ও তোলা)- তুমি কেমন দোকানদার যে এক বছরের মধ্যে লোকসান দিয়ে পাত্তাড়ি গুটালে?
পাথরে পাঁচ কিল = (উন্নত অবস্থা)- ব্যবসায়-বাণিজ্য করে যে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছে, এখন তার পাথরে পাঁচ কিল।
পালের গোদা = (সর্দার)- চুনোপুঁটিরাই ধরা পড়ে, আর যারা গোদা তাদের টিকিটি দেখার যো নেই।
পায়াভারি = (অহংকার)- পদোন্নতি হওয়াতে কেরানীর পায়াভারি হয়েছে।
পেঁজ পয়জার দুই-ই হল = (পেট ভরল না, পিঠেও সহিতে হল)- মকদ্দমায় টাকার শ্রাদ্ধ ও জমিজমা বেদখল হওয়ায় আমায় পেঁজ পয়জার দুই-ই গেল।
পেটে এক মুখে আর = (কুটিল আচরণ)- বাবা মায়ের সঙ্গে অন্তত পেটে এক মুখে আর করতে নেই?
পেটে খেলে পিঠে সয় = (লাভ হলে অন্যদিকে ক্ষতি সহ্য করা) - যে গরু দুধ দেয় তার লাথিও সহ্য হয়, কথায় বলে, পেটে খেলে পিঠে সয়।
পেটে পেটে বুদ্ধি = (দুষ্ট বুদ্ধি) - তোমার পেটে পেটে বুদ্ধি তা জানতাম না।
পেটে বোমা মারলেও কিছু বাহির না হওয়া = (কোন বিদ্যা না থাকা)- ছেলেটি অকাট মূর্খ, পেটে বোমা মারলেও কিছু বের হবে না।
পেটে ভাতে = (শুধু আহার)- পেটে ভাতে কাজ করো তো আমার বাড়িতেই থাক।
পেটের কথা = (মনের কথা)- বড্ড কঠিন লোক, ওর পেটের কথা বের করা কি সহজ।
পেটের শত্রট্ট = (যে সন্তান মায়ের দুঃখের কারণ)- এত কষ্ট করে মানুষ করলাম যাকে, বিয়ে করে সে পর হয়ে গেল, এমন পেটের শত্রট্ট কারো হয়?
পোয়াবারো = (সৌভাগ্য)- সাহেব বাড়িতে না থাকলেই ছেলেপিলেদের পোয়াবারো হয়ে থাকে।
পুঁটি মাছের প্রাণ = (ক্ষীণ প্রাণ)- প্রজা জমিদারকে বলল, “আমাদের পুঁটি মাছের প্রাণ, আমাদের মারবেন না।”
পুঁটি মাছের প্রাণ = (ছোট মনের ব্যক্তি) - পুঁটি মাছের প্রাণ নিয়ে কোন বড় কাজ হয় না।
পটের বিবি = (সুসজ্জিত) - রহিমা পটের বিবি হয়ে কোথায় যাচ্ছ?
পটল তোলা = (মারা যাওয়া) - কালাম মিয়া গতরাতে সাপের কামড়ে পটল তুলল।
পত্রপাঠ = (অবিলম্বে) - পত্রপাঠ বাড়িতে চলে আসবে।
পথ দেখা = (চলে যাওয়া) - অপরাধ করেছ, কথা না বাড়িয়ে এখনই পথ দেখ।
পথে বসা = (নিঃস্ব হওয়া) - বেশি লোভ করতে গিয়ে ব্যবসায় ধস নামায় লোকটা পথে বসেছে।
পথের কাঁটা = (গমনে বাধা)- আমার বিদেশ গমনে আমার পিতাই পথের কাঁটা।
পরকাল ঝরঝরে করা = (ভবিষ্যৎ নষ্ট করা) - মেহেদি লেখাপড়ায় ফাঁকি দিয়ে পরকাল ঝরঝরে করে রেখেছে।
পরের ধনে পোদ্দারী = (অন্যের টাকায় বাহাদুরী)- পরের ধনে পোদ্দারী করতে সবাই পারে। নিজের ট্যাঁকের দিকে হাত দাও।
পরের মুখে ঝাল খাওয়া = (না দেখে অপরের কথায় বিশ্বাস করা) - পরের মুখে ঝাল খাচ্ছ কেন-নিজে গিয়ে একবার দেখে এস।
পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা = (অপরকে দিয়ে কাজ উদ্ধার) - পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙার কৌশল আনোয়ার ভালো জানে।
ফ - বাগধারা
ফাঁকা আওয়াজ = (অন্তঃসারশূন্য বক্তব্য) - নেতাদের ফাঁকা আওয়াজ এখন কেউ বিশ্বাস করে না।
ফাঁদে পা দেওয়া = (ষড়যন্ত্রে পড়া)- না বুঝে ফাঁদে পা দিয়েছ ভাই, এখন সামলাও।
ফাঁপা ঢেঁকির শব্দ বড় = (ভিতরে যার কিছু নেই, তার বাহিরের শব্দ কিছু বেশি রকম)- স্কুলের দেউড়ি পার না হলে কি হবে, তার মুখের ইংরেজি বুলি বেশ বড়, কারণ ফাঁপা ঢেঁকির শব্দ বড়।
ফাঁপিয়া ওঠা = (বড়লোক হওয়া)- পয়সা এখন কন্ট্রাক্টরদের হাতে, দেখছ না লোকটা অল্পদিনের মধ্যেই কেমন ফেঁপে উঠেছে।
ফোঁপর দালালী = (খামোখা মাতব্বরী) - করিম তোমাকে ফোঁপর দালালি করতে বলেছে?
ফোঁড়ন কাটা = (খোঁচা মেরে কথা বলা) - আমাদের প্রত্যেকেরই ফোঁড়ন কেটে কথা বলার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
ফোঁড়ন দেওয়া = (উত্তেজনাকর টিপ্পনী কাটা)- ঝগড়া-ঝাটি ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে, তার মধ্যে ফোঁড়ন দেওয়া অনুচিত।
ফেন দিয়ে ভাত খায় গল্পে মারে দই = (মান রাখার জন্য আসল কথা গোপন করে মিথ্যা প্রচার)- সব দেশেই এক শ্রেণীর লোক আছে যারা নিঃস্ব, ফেন দিয়ে ভাত খায় গল্পে মারে দই।
ফতো নবাব = (নবাবী চালের দরিদ্র ব্যক্তি)- ওয়ারেশকে দেখে চিনতে পারলে না সে তো একজন ফতো নবাব, আসলে ফাঁকা।
ফতুর হওয়া = (নিঃস্ব) - কর্ম না করে এভাবে বসে খেলে রাজার গোলাও ফতুর হয়ে যায়।
ফপর দালালী = (গায়ে পড়ে মধ্যস্থগিরি)- আমাদের উকিলে উকিলে কথাবার্তার মধ্যে তোমাকে আর ফপর দালালী করতে হবে না।
ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া = (অল্পতেই ক্লান্ত হওয়া)- গাফফারকে দিয়ে এ কাজ কি করে হবে সেতো ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায়।
ফুলবাবু = (বড়লোকী আচরণ) - এক বেলা খাবার নেই, অথচ বিমল ফুলবাবু সেজে ঘুরে বেড়ায়।
ব - বাগধারা
বংশের বাতি = (একমাত্র উত্তরাধিকারী) - শাহেদ তার বংশের বাতি একমাত্র ছেলেটাকে হারালো।
বইয়ের পোকা = (খুব পড়ুয়া) - খুশি বইয়ের পোকা না হলে ভালো রেজাল্ট করতে পারত না।
বউ কাঁটকী = (বউকে যে জ্বালাতন করে)- বউ কাঁটকী শাশুড়ীর কাছে মেয়ে কি সুখে থাকবে?
বুক দিয়ে পড়া = (প্রাণপণে সহায়তা করা)- পরের বিপদে এমনভাবে বুক দিয়ে পড়তে হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মত কাউকে দেখিনি।
বুক দশ হাত হওয়া = (আনন্দে ও উৎসাহে মন পূর্ণ হওয়া)- বি.এ. পরীক্ষায় জজ সাহেবের ছেলে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ায় তাঁর বুক দশ হাত হল।
বুকের পাটা = (সাহস) - নান্নুর বুকের পাটা আছে, তাইতো জনতার মোকাবিলা করতে পারল।
বকধার্মিক = (ভন্ড ধার্মিক)- এ জগতে বকধার্মিকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
বগল বাজানো = (আনন্দ প্রকাশ করা) - অন্যকে বিপদে পড়তে দেখে বগল বাজিওনা, নিজেই বিপদে পড়বে।
বাগে পাওয়া = (কায়দায় পাওয়া)- একবার বাগে পাইতো গায়ের ঝাল মেটাব।
বাঘের আড়ি = (কঠিন শত্রুতা) - দুই বন্ধুর মধ্যে এখন বাঘের আড়ি চলছে।
বাঘের দুধ = (দুষ্প্রাপ্য বস্তু) - কথায় বলে, টাকা হলে বাঘের দুধও পাওয়া যায়।
বাজখাঁই গলা = (অত্যন্ত কর্কশ ও উচু গলা) - এমন বাজ খাঁই গলায় কাউকে ডাকা ঠিক নয়।
বাজিমাৎ = (সফল) - বিশ^কাপ ফাইনালে ব্রাজিল বাজিমাৎ করে দিয়েছে।
বানরের গলায় মুক্তাহার = (অপাত্রে উৎকৃষ্ট সামগ্রী দান)- আয়শার মত ডানাকাটা পরীর নাকি বিয়ে হল ছাপোষা আবুলের সঙ্গে-এ যেন বানরের গলায় মুক্তাহার।
বাপের বেটা = (পিতার উপযুক্ত পুত্র) - বাপের বেটা না হলে রুস্তম এমন কৃতিত্ব দেখাতে পারে?
বাম হাতের ব্যাপার = (ঘুষ)- বাঁম হাতের ব্যাপার করেই তিনি বাড়ি করেছেন।
বারো ভূত = (অনাত্মীয় লোকজন)- আত্মীয়-স্বজন নেই খান বাহাদুরের, সম্পত্তি বারো ভূতে খাবে।
বালির বাঁধ = (ক্ষণস্থায়ী) - এ পৃথিবী বালির বাঁধ।
বাড়া ভাতে ছাই = (সর্বনাশ) - কেবল শত্রু নয়, মিত্ররাও অনেক সময় মিত্রের বাড়া ভাতে ছাই দিতে কুন্ঠাবোধ করে না।
বিদ্যার জাহাজ = (অতিশয় পন্ডিত) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বিদ্যার জাহাজ।
বিদুরের খুদ = (শ্রদ্ধায় সামান্য উপহার)- গরীব প্রশাসকের বাড়িতে এসেছেন, এখন আশা করি এ বিদুরের খুদে আনন্দিত হবেন।
বিনা মেঘে পানি = (অকারণে কাজের সৃষ্টি)- নতুন নতুন অফিসে যোগ দিয়ে সাহেবের সুনজরে পড়েছ, যেন বিনা মেঘে পানি।
বিনামেঘে বজ্রপাত = (হঠাৎ বিপদ) - পিতার মৃত্যু সংবাদ আমার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই।
বিশ বাঁও জলে = (সাফল্য লাভের অসম্ভাব্যতা)- অপরাধ যখন আদালতে প্রমাণিত হল, তখন উদ্ধার পাওয়ার আশা বিশ বাঁও জলে।
বিষ দাঁত ভাঙা = (অনিষ্ট করার শক্তি নষ্ট করা) - সাপ ধরেই সাপুড়েরা তার বিষ দাঁত ভেঙে দেয়।
বিষিয়ে উঠা = (বিরূপ হওয়া)- শত্রট্টর মুখে নিন্দা শুনে সালাম সাহেবের দ্বারা মন তার বিরুদ্ধে বিষিয়ে উঠল।
বিষের পুটুলি = (বিদ্বেষী)- বড় বউ এক বিষের পুটুলি। ছোট জা’র রূপ দেখে জ্বলে পুড়ে মরছে।
বিষবৃক্ষ = (অনাচারের উৎস) - সমাজ থেকে সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ তুলে ফেলতে হবে।
বিসমিল্লায় গলদ = (শুরুতেই ভুল) - বিসমিল্লায় গলদ করে কি আর জীবনের হিসাব মিলানো যায়?
বিড়াল তপস্বী = (বকধার্মিক) - সমাজে বিড়াল তপস্বী লোকের অভাব নেই।
বিড়ালের আড়াই পা = (বেহায়াপনা)- হাজার বকলেও লাভ নেই, তার হচ্ছে বিড়ালের আড়াই পা।
বেগার ঠেলা = (অযত্নে কাজ করা)- কিছু দক্ষিণা লাভের আশায় যারা ‘নোট’ লেখেন, তাঁরা বেগার ঠেলে থাকেন।
বেল পাকিলে কাকের কি = (উপভোগ করতে অক্ষম ব্যক্তির পক্ষে উৎকৃষ্ট সামগ্রীর প্রতি লোভ করা নিষ্ফল)- আমি তো গরীবের ছেলে, রাজার মেয়ে বিয়ে করতে চাইলেই তো হবে না, বেল পাকলে কাকের কি?
বোঝার উপর শাকের আঁটি = (অনেকের সঙ্গে সামান্য)- বিয়ে বাড়িতে মওলানা সাহেব চল্লিশটি রসগোল্লা খাবার পর পাঁচটি পানতোয়া খেয়ে বোঝার উপর শাকের আঁটিই যেন রক্ষা করলেন।
বজ্র আটুনি/ফস্কা গিরো = (বেশি কড়াকড়ি)- ছেলেটিকে শাসনে রেখেছিল ভায়া, এখন ছাড়া পেয়ে দুরন্ত হয়ে উঠেছে- এ যেন বজ্র আঁটুনি ফস্কা গিরো।
ব্যাঙের আধুলি = (সামান্য ধন)- বাপু, সাহায্য করলেই যদি হাজার খানেক টাকা দাও, দুশো টাকা তো ব্যাঙের আধুলি।
ব্যাঙের সর্দি = (অসম্ভব কিছু)- যে সাতবার জেল খেটে এসেছে, তাকে দেখাও জেলের ভয়, ব্যাঙের আবার সর্দি।
ব্যাজোর ব্যাজোর করা = (আপত্তি)- যা দিলাম নাও, আর ব্যাজোর ব্যাজোর করো না।
বুদ্ধির ঢেঁকি = (নির্বোধ)- ছোকরা বুদ্ধির ঢেঁকি, কোন কাজর নয়।
বর্ণচোরা = (স্বাভাবিক বর্ণ গোপন রাখে এমন)- আপনি বাপু একটা বর্ণ চোরা আম, বুঝবার যো নেই যে; আপনি তার একটা অনুরক্ত।
বসন্তের কোকিল = (সুসময়ের বন্ধু) - বসন্তের কোকিল থেকে আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।
বড় মুখ = (গর্ব)- পিতা বড় মুখ করে ছেলের কথা বলতে আসে; কিন্তু এ কথা যেন শুনে মুখ চুন করল।
ভ - বাগধারা
ভুঁইফোঁড় = (নবীন) - হাসেম ব্যবসায় ভুঁইফোঁড় হওয়ায় লাভ কম হচ্ছে।
ভুখণ্ডীর কাক = (দীর্ঘায়ু ব্যক্তি) - একশ বিশ বছরের বৃদ্ধটি ভুখণ্ডীর কাকের ন্যায় বেঁচে আছে।
ভাইয়ের ভাত ভাজের হাত = (ভ্রাতৃগৃহে বসবাসকারী যে স্ত্রীলোক ভাইয়ের অন্ন খায় ভ্রাতৃবধূর কর্তৃত্বও সয়)- বেগম নিতান্ত অসহায়, তাই ভাইয়ের ভাত ভাজের হাত দুই-ই জুটেছে।
ভাজে ঝিঙে ত বলে পটোল = (সত্য গোপন করে মনে রাখবার জন্য মিথ্যা প্রচার করা)- লোকটির ডেঁপোমি দেখলে, সংসার চলে না, ভাজে ঝিঙে ত বলে পটোল।
ভানুমতীর খেলা = (অবিশ্বাস ব্যাপার) - পাঁচতলা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে বেঁচে গেল, এ যে ভানুমতির খেলা।
ভালুক জ্বর = (ক্ষণস্থায়ী জ্বর)- ম্যালেরিয়া রোগী গফুর তার ভালুক জ্বর ছেড়ে যাওয়া মাত্র ভাত খেল।
ভাড়ের কলসী = (স্বার্থসিদ্ধির উপায়)- মাহমুদ মোড়ল রহমানকে ভাড়ের কলসীর মতন ব্যবহার করে।
ভিজা বিড়াল = (কপটাচারী)- সে একজন ভিজা বিড়াল, বাইরে শান্ত ভিতরে কূট।
ভিটায় ঘুঘু চরান = (সর্বনাশ করা)- জমিদাররা আগে প্রজাদের ভিটেয় ঘুঘু চরাতেন।
ভীমরুলের চাকে খোঁচা দেওয়া = (উত্তেজিত করা)- প্রচলিত জনমতের বিরুদ্ধাচরণ করা আর ভীমরুলের চাকে খোঁচা দেওয়া এক কথা।
ভেরেণ্ডা ভাজা = (বেকার জীবনযাপন করা) - লেখাপড়া না করে সারাদিন ভেরেণ্ডা ভাজলে চলবে।
ভেড়ার গোয়ালে আগুন লাগা = (বিপদের প্রতিকার চেষ্টা নেই অথচ কোলাহল সৃষ্টি)- সাপ না মেরে গোলমাল, ইহা ভেড়ার গোয়ালে আগুন লাগার কথা স্মরণ করাবে।
ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ = (অতিরিক্ত অপব্যয়) - ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ কেবল পরের টাকা দিয়েই সম্ভব।
ভূতের বেগার খাটা = (নিষ্ফল পরিশ্রম) - সারাজীবন ভূতের বেগার খেটে গেলাম, ফল পেলাম না।
ভরাডুবি = (সর্বনাশ) - চোরা-চালানদের জন্য দেশীয় শিল্পের একদিন নিশ্চিত ভরাডুবি হবে।
ভরাডুবির মুক্তিলাভ = (হৃতবিশিষ্ট)- সবই তো গেছে, এখন অস্থাবর সম্পত্তিটা আমার ভরাডুবির মুক্তিলাভ।
ভষ্মে ঘি ঢালা = (নিষ্ফল কাজ) - তোমাকে পড়ার উপদেশ দেয়া আর ভষ্মে ঘি ঢালা একই কথা।
ম - বাগধার
মুখ তুলে চাওয়া = (প্রসন্ন হওয়া) - দীর্ঘদিন পর বিধাতা এবার মুখ তুলে চেয়েছেন।
মুখ রাখা = (মান রাখা)- সৈয়দ হক এম. এ. পরীক্ষায় স্বর্ণপদক পেয়ে বাপের মুখ রেখেছে।
মাথায় ওঠা = (প্রশ্রয় পেয়ে ধৃষ্ট হওয়া)- পরের ছেলে, তাকে আদর দিতেই মাথায় উঠতে চায় দেখছি।
মুখে চুনকালি দেওয়া = (কলঙ্ক দেওয়া)- কুলাঙ্গার মেয়ে বংশের মুখে চুনকালি পরালো।
মুখে ফুল চন্দন পড়া = (শুভ সংবাদের জন্য ধন্যবাদ)- আমাকে এই সুসংবাদ দেওয়ার জন্য তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক।
মগের মুল্লুক = (অরাজকতায় পূর্ণ দেশ) - সন্ত্রাসীদের দাপটে মনে হয়, আজ আমরা মগের মুল্লুকে বাস করছি।
মাকাল ফল = (অন্তঃসারশূন্য) - অধিকাংশ ছাত্ররাই প্রকৃত বিদ্যার্জন না করে আজ ডিগ্রিধারী মাকাল ফলে পরিণত হচ্ছে।
মাছি মেরে হাত কাল করা (ছোট কাজ করে অখ্যাতি অর্জন)- খান সাহেবের ছেলে হাশিম খান বাড়ির কাজের মেয়েটির গায়ে হাত তুলল, এ যে দেখছি সে মাছি মেরে হাত কাল করল।
মাছি-মারা কেরানি = (জি-হুজুর ধরনের ব্যক্তি) - ছাত্তার মাছি-মারা কেরানি, তাকে দিয়ে এ কাজ হবে না।
মাছের মা = (নির্মম)- রুনি বেগমের নিজের পেটের ছেলের উপর দয়ামায়া নেই, যেন মাছের মা।
মাছের মার পুত্রশোক = (কপট শোক প্রকাশ) - দরিদ্রদের জন্য রাজনীতিবিদদের দরদ্টা মাছের মার পুত্রশোকের মতই।
মাটির মানুষ = (কোমল প্রকৃতির) - ফারুক সাহেবের মতো মাটির মানুষ আর দেখিনি।
মাটির মানুষ = (নিরীহ ব্যক্তি)- করিম সাহেব মাটির মানুষ, এমন মহাপ্রাণ ব্যক্তি সচরাচর বিরল।
মাঠে মারা যাওয়া = (ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়া)- চোর ধরার এত ষড়যন্ত্র, শেষ পর্যন্ত মাঠে মারা যাবে ভাবতে পারিনি।
মাৎস্যন্যায় = (অরাজকতা, মৎস্যের ন্যায় হানাহানী)- দেশ যে দুর্নীতিতে মাৎস্যন্যায় হয়ে উঠল, শেষরক্ষা হবে কীভাবে?
মাথা খাওয়া = (সর্বনাশ করা)- পিতা পুত্রকে আদর দিয়ে তার মাথা খাওয়ার উপক্রম করেছেন।
মাথা খোঁড়া = (মাটিতে মাথা ঠোকা) - একমাত্র সন্তানকে হারিয়া মা মাটিতে মাথা খুড়ছে।
মাথাকাটা যাওয়া = (অপমানিত হওয়া) - তৃতীয় বিভাগে পাশ করে শফিকের মাথা কাটা গিয়েছে।
মাথার মণি = (শ্রদ্ধেয়)- শেরেবাংলা ফজলুল হক বাঙালির মাথার মণি।
মাথায় ওঠা = (প্রশ্রয় পেয়ে ধৃষ্টতা) - গ্রামের বখাটে ছেলেরা লাই পেয়ে মাথায় উঠেছে।
মাথায় রাখা = (ভক্তি সম্মান বা আদর-যত্ন করা)- মায়ের দেওয়া ধুতি চাদর মাথায় রাখি, ওরে ভাই।
মানিকজোড় = (অন্তরঙ্গ বন্ধুদ্বয়)- রহিম-আসাদ দু’জনে একেবারে মানিক জোড়।
মানে মানে = (সসম্মানে)- ভায়া, এখনো বলছি মানে মানে বিদায় হও, নইলে তুমি নাকালের একশেষ হবে।
মান্ধাতার আমল = (প্রাচীনকাল)- শিক্ষার অভাবে আমাদের দেশের মানুষ আজও মান্ধাতার আমলের রীতিনীতি অনুসরণ করছে।
মামার বাড়ির আবদার = (সহজে মেটে এমন আকাক্ষা)- কি ব্যাপার, একি মামার বাড়ির আব্দার পেয়েছ যে চাইলে টাকা দেব।
মিছরির ছুরি = (মুখে মধু অন্তরে বিষ) - করিম ভাই এর কথাগুলো আমার কাছে মিছরির ছুরির মত মনে হয়েছে।
মেও ধর = (ঝুঁকি লওয়া)- শরীরের উপর যে এত অত্যাচার করছ, অসুখ হলে মেও ধরবে কে?
মেনিমুখো = (সলজ্জ)- কলেজে পড়া ছেলে, কিন্তু এখনো সেই মেনিমুখো হয়ে থাকলে ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার।
মণিকাঞ্চন যোগ = (সুন্দরের সাথে সুন্দরের মিলন) - যেমন বর, তেমন কনে। এ যেন মণিকাঞ্চন যোগ।
মন না মতি = (মানবচিত্তের অস্থিরতা)- মানব মন, তার তো পরিবর্তন ঘটতে পারে, কথায় বলে মন না মতি।
মন পড়ে থাকা = (বিশেষ বিষয়ে আকর্ষণ) - খেলাধুলায় মন পড়ে থাকলে পড়া মুখস্থ হবে না।
মনে ধরা = (পছন্দ হওয়া) - পরেশের আচরণ আমার খুব মনে ধরেছে।
মনে লাগা, মনে ধরা = (পছন্দ হওয়া)- মেয়েটি নিখুঁত সুন্দরী, আর শিক্ষিতা, তাই আমাদের মনে লেগেছে।
মন্দের ভালো = (অপেক্ষাকৃত ভালো) - ফেল করার চেয়ে তৃতীয় বিভাগ পাওয়া মন্দের ভালো।
মরার উপর খাঁড়ার ঘা = (বিপদের ওপর বিপদ) - অন্যায়ের বিচার চাইতে থানায় গিয়ে উল্টো তাকেই জরিমানা দিতে হয়েছে। এ যেন মরার উপরে খাঁড়ার ঘা।
মরণ কামড় = (অনিষ্ট করার শেষ চেষ্টা) - জঙ্গি তৎপরতা আমাদের দেশের উপর মরণ কামড় দিয়েছে।
মশা মারতে কামান দাগা = (সামান্য কাজে বিরাট আয়োজন) - চাঁদাবাজ দমনের জন্য পুলিশ এনে মশা মারতে কামান দাগা হলো।
মুসকিল আসান = (বিপদ কেটে যাওয়া) - মনির এখানে আসাতে আমি একটা মহা মুশকিল থেকে আসান পেলাম।
য - বাগধারা
যক্ষের ধন = (কৃপণের সম্পত্তি) - দুলুর মতো যক্ষের ধন দিয়ে সমাজ সেবা করা চলে না।
যাচ্ছে তাই = (নিকৃষ্ট) - আবীদের কাজটা একেবারে যাচ্ছে তাই হয়েছে।
যেখানে সেখানে = (যত্রতত্র) - যেখানে সেখানে ধূমপান করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যত গর্জে তত বর্ষে না = (আড়ম্বরের তুলনায় কাজ কম)- বড় সাহেব কেরানীদের খুব শাসান, কিন্তু কারও কোন ক্ষতি করেন না, দেখে মনে হয় যত গর্জে তত বর্ষে না।
যম যন্ত্রণা = (মৃত্যু)- একমাত্র সন্তানের নিখোঁজ সংবাদে মাতাপিতা, যম-যন্ত্রণা ভোগ করলেন।
যমের অরুচি = (সহজে যে মারা যায় না এই অর্থে)- আশি বছরের বৃদ্ধের প্রতি যমেরও অরুচি।
র - বাগধারা
রুই-কাতলা = (নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি)- চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও সবসময় রুই-কাতলা থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
রক্তের টান = (স্বজনপ্রীতি) - যত মনমালিন্যই হোক ভাই-বোনের মধ্যে রক্তের টান থাকবেই।
রগচটা = (অত্যন্ত বদ মেজাজী) - আমাদের মধ্যে রানা অত্যন্ত রগচটা স্বভাবের লোক।
রা করা = (কোন কথা বলা)- তুই কেমন ছেলে বাবা বলতো, এ যে সাত চড়েও রা করিস না।
রাই কুড়িয়ে বেল = (অল্প অল্প সঞ্চয়ে প্রচুর অর্থ জমানো)- সঞ্চয়ের অভ্যাস থাকলেই রাই কুড়ায়ে বেল করা সম্ভবপর।
রাঘববোয়াল = (অর্থলোভী) - বড় বড় চাকরিতে কিছু কিছু রাঘববোয়াল লোক আছে।
রাঙা মূলো = (প্রিয়দর্শন কিন্তু গুণহীন) - এমন রাঙা মূলো দিয়ে এ কঠিন কাজ হবে না।
রাজ-ঘোটক = (সুন্দর মিল) - রাজ-ঘোটকের দ্বারাই কেবল বর-কনের এমন মনিকাঞ্চন যোগ সম্ভব।
রাজা উজির মারা = (বড় বড় কথা বলা)- বক্তৃতার সময় অনেকেই রাজা উজির মারতে পারে, কাজের বেলায় ফক্কা।
রাতকানা = (যে রাতে দেখে না) - ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়।
রাবণের চিতা = (চির অশান্তি) - একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে মায়ের বুকে রাবণের চিতা জ্বলছে।
রাশ ভারী = (গুরুগম্ভীর) - জামিল সাহেব একজন রাশ ভারী লোক।
রাহুর দশা = (দুঃসময়) - শেয়ার বাজারে প্রচুর টাকা মার খেয়ে শোভন রাহুর দশায় পড়েছে।
রায় বাঘিনী = (উগ্র স্বভাবের নারী) - সংসারে রায় বাঘিনীদের নিয়ে সুখ-সমৃদ্ধি আশা করা যায় না।
রেখে ঢেকে বলা = (চেপে রাখা) - দশ জনের সামনে রেখে ঢেকে কথা বলতে হয়।
ল - বাগধারা
লক্ষ্মীর বরযাত্রী = (সুসময়ের বন্ধু, অসময়ের কেউ নয়)- লাখপতি বন্ধুর হাতে যদ্দিন টাকা আছে তদ্দিনই তোমার মত তোষামোদকারী লক্ষ্মীর বরযাত্রীরা ঘুরে বেড়াবে সে কি আমরা বুঝ না ভায়া।
লগন চাঁদ = (ভাগ্যবান)- হক সাহেব লগন চাঁদ বলেই চাকরিতে উন্নতি হল।
লাল বাতি জ্বালা = (দেউলিয়া হওয়া) - রহিমের পরামর্শে ব্যবসা করে আমার লাল বাতি জ্বলল।
লাল হয়ে যাওয়া = (ধনশালী হওয়া) - দুর্নীতি করে অনেকে লাল হয়ে গিয়েছে।
লালবাতি জ্বালানো = (ধ্বংস হওয়া)- ব্যাংকটা লালবাতি জ্বালানোতে অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হল।
লেজ গুটানো = (ভীত হওয়া) - পুলিশকে দেখে চোরটি লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেল।
লেজে খেলা = (চাতুরী করা)- ভায়া, আমাকে নিয়ে কেবলি লেজে খেলিয়ে বেড়াচ্ছ।
লেজে গোবরে করা = (বিশৃঙ্খলা) - অজিতকে কাজ দেয়া মানেই সব কাজ লেজে গোবরে করে ফেলা।
লেজে পা পড়া = (স্বার্থে আঘাত লাগা)- এবার তোমাদের লেজে পা পড়েছে তাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছ।
লেফাফা দুরস্ত = (বাইরের ঠাট)- লোকটি যতই লেফাফা দুরস্ত হোক, আসলে সে কিন্তু গরীব।
লোক হাসানো = (আচরণে হাস্যস্পদ হওয়া) - মিজানের আচরণই এই, সে অকারণে লোক হাসাতে পারে।
লুফে নেওয়া = (সাগ্রহে গ্রহণ করা) - কামরুলের প্রস্তাবটা শাকিল লুফে নিল।
লম্বা দেয়া = (পালিয়ে যাওয়া) - পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চোরটি লম্বা দিয়েছে।
ললাটের লিখন = (অমোঘ ভাগ্য) - ললাটের লিখন না যায় খ-ন।
শ - বাগধারা
শকুনি মামা = (কুটিল) - গ্রাম্য রাজনীতি মানেই শকুনি মামাদের অবাধ বিচরণ।
শুকনোয় ডিঙি চলা = (জোরে কাজ চালানো)- দশজনে মিলেমিশে কাজ করলে শুকনোয় ডিঙ্গি চালানো যায়।
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা = (দোষ গোপনের বৃথা চেষ্টা) - দোষ করে এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা কর না।
শাঁখের করাত = (উভয় সংকট) - সেখানে গেলেও বিপদ না গেলেও বিপদ, এ যেন শাঁখের করাত।
শাপে বর = (অকল্যাণ হতে কল্যাণ) - দশটার ট্রেনটা ফেল করে শাপে বর হয়েছে, কারণ ট্রেনটির দুর্ঘটনায় বহুলোক মারা গেছে।
শিরে সংক্রান্তি = (আসন্ন বিপদ) - কাজের লোকের অভাবে তোমার শিরে-সংক্রান্তি দেখে আমারই কষ্ট হচ্ছে।
শিয়ালের যুক্তি = (অকেজো যুক্তি)- তোমার শিয়ালের যুক্তি খাটবে না, উকিলের কাছে যুক্তি নাও গে।
শেষ রক্ষা = (কোনমতে সম্মান বাঁচানো)- খান সাহেবের দু’ছেলের পরীক্ষায় ফেলের সংবাদের পর মেয়েটি ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে এম. এ. পাষ করায় শেষ রক্ষা হল।
শেষ রক্ষা = (শুভ সমাপ্তি) - যাক, ভালয় ভালয় শেষ রক্ষা হলে বাঁচি।
শত্রুর মুখে ছাই = (কুদৃষ্টি এড়ানো) - আমার রেজাল্ট শুনে যেন শত্রুর মুখে ছাই পড়ল।
শনির দশা = (দূরদৃষ্ট) - আজ ক’বছর ধরে তোমার শনির দশা লেগেই আছে।
শনির দৃষ্টি = (কুদৃষ্টি)- নববর্ষের শনির দৃষ্টি লেগেছে, একটার পর একটা দুর্ঘটনা লেগেই আছে।
শূন্যে সৌধ নির্মাণ = (অলীক কল্পনা)- যৌবনের সোনালী স্বপ্ন পরিণত বয়সে শূন্যে সৌধ নির্মাণের সামিল।
শ্বেতহস্তী পোষা = (কর্মচারীদের জন্য অর্থব্যয় করা)- ওয়াপদার টাকা শ্বেতহস্তী পুষতেই শেষ হয়ে গেল, অন্য কাজ হবে কি করে?
শরতের শিশির = (সুসময়ের বন্ধু) - প্রকৃত বন্ধুরা শুধু শরতের শিশির নয়, তারা অসময়েরও বন্ধু বটে।
ষ - বাগধারা
ষাটের কোলে = (অধিক বয়স) - সাজু দেখতে দেখতে ষাটের কোলে এসে পড়ল।
ষাঁড়ের গোবর = (অপদার্থ)- তোমার মত ষাঁড়ের গোবর লোক বলে কিনা যে, মন্ত্রী হবে, দিনে দিনে আর কতই শুনব।
ষোল আনা = (পুরোপুরি)- স্বার্থের ব্যাপারে ষোল আনা, পরকে দেবার নাম নেই।
ষোল কড়াই কানা = (সব অসার)- আবুল হোসেনকে মনে হয়েছিল তুখোড়, এখন দেখছি তার স্বভাবের ষোল কড়াই কানা।
ষোলকলা = (সম্পূর্ণ)- শামসুল হক পিতা এনামুল হকের সাহিত্য শিল্প বোধের প্রকৃতি ষোলকলায় পেয়েছে।
ষন্ডামার্কা = (একগুঁয়ে ও বলিষ্ঠ)- ষন্ডামার্কা ছেলেদের নিয়ে সাহিত্য সমিতি গড়লে তার ভবিষ্যৎ কি হবে কে জানে।
স - বাগধারা
সকার বকার করা = (গালি দেওয়া)- সকলের সামনে সকার বকার করো না বলছি।
সুখের পায়রা = (বিলাসী) - সংসারে কেউ কেউ সুখের পায়রা থেকে যায়।
সাক্ষী গোপাল = (নিষ্ক্রিয় দর্শক) - যারা সাক্ষী গোপাল তাদের দিয়ে কোন কাজ হয় না।
সাত খুন মাফ = (অত্যধিক প্রশ্রয়) - মায়ের কাছে সন্তানের সাত খুন মাফ হয়ে যায়।
সাত জন্মে = (কখনও)- কবি ছেলে তুমি তোমার মুখে এমন কথা? এ ধরনের উক্তি আমি সাত জন্মেও শুনিনি?
সাত পাঁচ ভাবা = (নানারকম অন্ত)- তাঁকে কথা শোনাতেই গিয়েছিলাম, কিন্তু সাত পাঁচ ভেবে না বলেই চলে এলাম।
সাতেও নয়, পাঁচেও নয় = (নির্লিপ্ত)- বাড়ির কর্তা নিরীহ মানুষ, কারো সাতেও নয়, পাঁচেও নয়।
সাত-পাঁচ = (বিভিন্ন রকম কথা) - সাত-পাঁচ বুঝিয়ে আমাকে বোকা বানাবার চেষ্টা করছো কেন?
সাত-সতেরো = (আবোল-তাবোল) - সাত-সতেরো না বলে তাড়াতাড়ি আসল কথাটি বলো।
সাপে-নেউলে = (ভীষণ শত্রুতা) - বড়ভাই ও ছোটভাইয়ের মধ্যে সাপে নেউল সম্পর্ক।
সাপের ছুঁচো গেলা = (অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে কাজ করা)- বাজারে একশত টাকার জিনিস কিনতে গিয়ে আজহার সাহেব স্ত্রীর অনুরোধে পাঁচশত টাকার জিনিস কিনতে বাধ্য হয়ে ছুঁচো গেলার মত কাজ করলেন।
সাপের পাঁচ পা দেখা = (অহংকারী হওয়া) - বিএ পাস করে নান্টু যেন সাপের পাঁচ পা দেখেছে।
সাফাই গাওয়া = (দোষ এড়ানোর চেষ্টা) - তোমার মেয়ের সাফাই গাওয়া বন্ধ কর।
সাবধানের মার নেই = (সতর্কতায় বিপদ নেই) - সব সময় পানি ফুটিয়ে খাবে কারণ সাবধানের মার নেই।
সেয়ানে সেয়ানে = (চালাকে চালাকে) - সোহরাব-রুস্তমের লড়াই ছিল সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।
সোনা বাহির আঁচলে গেরো = (মূল্যবান বস্তুর বদলে মূল্যহীন বস্তুর আদর)- মান-সম্মান ত্যাগ করে তুচ্ছ প্রাণের প্রতি এই মমতা সোনা বাহির আঁচলে গেরোর সামিল।
সোনার চাঁদ = (আদরের পাত্র)- সোনার চাঁদ নাতিটিকে চৌধুরী সাহেব রক্ষা কবচের মত আগলে রেখেছেন।
সোনার পাথর বাটি = (অসম্ভব বস্তু) - পড়ালেখা না করলে পরীক্ষায় পাস তোমার কাছে সোনার পাথর বাটি হয়ে দাঁড়াবে।
সোনায় সোহাগা = (ভালর সাথে ভালর মিল)- পাত্রীটিও ভাল, পাত্রও বেশ-একেবারে সোনায় সোহাগা।
স্বখাত সলিল = (নিজের বিপদ ডাকা)- তিনি রাতারাতি ধনী হতে গিয়ে স্বখাত সলিলে ডুবে গেলেন।
সবে ধন নীলমনি = (একমাত্র অবলম্বন)- সবে ধন নীলমনি পুত্রকে হারিয়ে ওয়াজেদ সাহেব শোকাতুর হয়েছেন।
স্বর্গের সিড়ি = (শ্রেষ্ঠ সুখ লাভের উপায়) - মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য স্বর্গের সিঁড়ি।
সরিষার ফুল দেখা = (চোখে আঁধার দেখা)- সময় থাকতে ভালভাবে তৈরি হওয়া ভাল, নচেৎ পরীক্ষার হলে বসে সরিষার ফুল দেখাই সার হবে।
সরফরাজি চাল = (বাইরে মিত্রতা)- সেদিন আদালতে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলে, আর আজ বেশ সরফরাজি চাল চালছ।
সরষে ফুল দেখা = (বিপদে দিশেহারা হওয়া) - সারাবছর পড়াশুনা না করে পরীক্ষার সময় আমি এখন চোখে সরষের ফুল দেখছি।
স-সে-মি-রা অবস্থা = (কান্ডজ্ঞানহীন অবস্থা)- তোমাদের অনাসৃষ্টি কান্ডজ্ঞান দেখে আমার তো স-সে-মি-রা অবস্থা।
হ - বাগধারা
হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গা = (গোপন কিছু ফাঁস করা) - বেশি বাড়াবাড়ি হলে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেবো।
হাত ঝাড়া দিলে পর্বত = (ধনাধিক্য)- কিছু সাহায্য দাও বাবা, তোমার তো হাত ঝাড়া দিলেই পর্বত।
হাত টান = (চুরির অভ্যাস) - অভাবে পড়ে অনেকেই হাত টানের অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে।
হাত দিয়ে হাতী ঠেলা = (অসম্ভবকে সম্ভবপর করতে চেষ্টা করা)- হাত দিয়ে হাতী ঠেলবার মত দুরাশা আমি করি না।
হাত ধরা = (অনুরোধ করা) - আজিজ বড় সাহেবের হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে চাকরি বাঁচাল।
হাত পাকানো = (দক্ষতা)- নকল বিদ্যায় বেশত হাত পাকিয়েছে বটে।
হাত পাতা = (ভিক্ষা করা) - আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে হাত পাতা উচিত নয়।
হাতির খোরাক = (বেশি খাওয়া) - চার জনের ভাত একজনেই খেয়ে ফেলল, এ দেখছি হাতির খোরাক।
হাতির পাঁচ পা দেখা = (দুঃসাহসী হওয়া)- আমার ছেলে তুমি, তুমি আমাকে মান না, হাতির পাঁচ পা দেখেছ।
হাতে কলমে = (প্রত্যক্ষ জ্ঞান) - অনীক মাহমুদ স্যার আমাদের হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন।
হাতে পাঁজি মঙ্গলবার = (জানার সুযোগ থাকলেও বৃথা তর্ক)- বৃথা তর্কাতর্কি না করে হাতে পাঁজি মঙ্গলবার পুস্তকখানি খুললেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
হাতে হাতে = (সঙ্গে সঙ্গে) - মিল্টনকে টাকাটা হাতে হাতে দিও।
হাতে-কলমে = (যথার্থ কাজ করে)- হাতে কলমে শিক্ষাই তো প্রকৃত শিক্ষা।
হাতেখড়ি = (আরম্ভ) - করিম স্যারের কাছে আমার লেখাপড়ার হাতেখড়ি।
হাতেনাতে = (প্রমাণসহ) - চুরি করতে এসে চোরটা হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
হাতের পাঁচ = (শেষ সম্বল) - একশ টাকাই হাতের পাঁচ ছিল, তাও আজ খরচ হয়ে গলে।
হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা = (হেলায় সুযোগ নষ্ট করা) - হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা ঠিক নয়।
হাতটান = (চুরির অভ্যাস)- ছোকরা চাকরটির একটু হাতটান আছে ঘরের জিনিসপত্র সাবধানে রেখো।
হাতধুয়ে বসা = (নিশ্চিন্ত বোধ করা) - এভাবে হাত ধুয়ে বসে থাকলে সংসার চলবে কি করে?
হা-পিত্যেশ করা = (ব্যাকুলভাবে আশা করা) - বাবার সম্পত্তির লোভে কামাল হা-পিত্যেশ করে বসে আছে।
হাল ছেড়ে দেয়া = (হতাশ হয়ে চেষ্টা থেকে বিরত) - আর যাই হোক হাল ছেড়ে দিও না।
হালে পানি পাওয়া = (সুবিধা করা) - বেশ অর্থাভাবে ছিলাম, টাকা ক’টা পেয়ে আমি যেন হালে পানি পেলাম।
হালে পানি পায় না = (অকৃতকার্য হওয়া)- বড় বড় মহারথী হালে পানি পায় না আর উনি দেবেন সমস্যা সমাধান করে, হাসালে ভায়া হাসালে।
হালছাড়া = (হতাশ হওয়া)- পরীক্ষায় পাসের আশা নেই দেখে আবুল হোসেন হাল ছেড়ে দিয়েছে।
হাড় জুড়ানো = (শান্তি পাওয়া)- শেষমেষ মরে গিয়ে বৃদ্ধ গাঁ শুদ্ধ মানুষের হাড় জুড়িয়েছে।
হাড়ির হাল = (মলিন)- রোদে পানিতে ভিজে চেহারাটি করেছ হাড়ির হাল।
হাড়ে দূর্বা গজানো = (অলস) - হাড়ে দূর্বা গজানো লোকদের দিয়ে দেশের মঙ্গল চিন্তা করা নিরর্থক।
হাড়ে বাতাস লাগা = (শান্তি পাওয়া)- ডাকাত দলটি ধরা পড়েছে, সবার হাড়ে বাতাস লেগেছে।
হাড়ে হাড়ে = (সম্পূর্ণরূপে) - লেখাপড়া না করলে একদিন হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
হাড়ে হাড়ে চেনা = (গভীরভাবে চেনা) - বিপদে পড়ে বন্ধুদেরকে হাড়ে হাড়ে চেনা যায়।
হাড়-হাভাতে = (হতভাগ্য) - হাড়-হাভাতে ছেলেটা বাপের বিশাল সম্পদ ধ্বংস করে পথে বসেছে।
হাড়হদ্দ = (নাড়ী নক্ষত্র)- কালকের ছোকরা আলতাফ আমারই উপর চোখ রাঙ্গায় আমি ওর হাড়হদ্দ জানি।
হিতে বিপরীত = (উল্টা ফল) - ছেলেমেয়েদের খুব বেশি স্বাধীনতা দিলে হিতে বিপরীত হয়।
হিমসিম খাওয়া = (ক্লেশ পাওয়া) - এত সামান্য পড়াশুনা করেই হিমসিম খাচ্ছ।
হীরের টুকরো = (গৌরবময়) - এ রকম হীরের টুকরো ছেলেরাই তো দেশের সম্পদ।
হেস্তনেস্ত = (মীমাংসা) - আসাদ ব্যাপারটার একটা হেস্তনেস্ত করে দিল।
হ-য-ব-র-ল = (এলোমেলো) - খুকু কখনই বইগুলো হ-য-ব-র-ল করে রাখে না।
হদিস পাওয়া = (সঠিক সংবাদ পাওয়া) - আজ দু’বছর হয়ে গেল ছেলেটার কোনো হদিস পাচ্ছি না।
হরিলুট = (অপচয়) - কোম্পানিতে আগুন লাগায় সবাই হরিলুট শুরু করেছে।
হরিষে বিষাদ = (আনন্দে দঃখ)- ঘরে লেলিহান অগ্নিশিকার ভিতর হতে শিশু দুটিকে উদ্ধার করা গেলেও উদ্ধারকর্তার মৃত্যুতে হরিষে বিষাদ উপস্থিত হল।
হ্রস্ব-দীর্ঘ-জ্ঞান = (সাধারণ জ্ঞান)- অকাট মূর্খ বলেই তো তোমার মত হ্রস্ব-দীর্ঘ-জ্ঞানের ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, সবই আমার নসিব।
হস্তিমূর্খ = (বোকা)- তোমার মত হস্তিমূর্খ লোক এমন সাহসের কাজ করতেই পারে না।