ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট


১. ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে?

উত্তরঃ-ভূমিসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপ, ভূমির হিস্যা, ভূমির পরিমাণ এবং ভূমিসংক্রান্ত সকল দিক নির্দেশনা ও বন্দোবস্তকে ভূমি ব্যবস্থাপনা বলা হয়।

২. পাট্টায় কী কী তথ্যাদি থাকত?

উত্তরঃ- পাট্টায় নিম্নলিখিত তথ্যাদি উল্লেখ থাকতঃ-

(ক) চৌহদ্দী

(খ) জমির পরিমাণ

(গ) জমির শ্রেণি

(ঘ) খাজনার পরিমাণ

(ঙ) চাষির অধিকার ইত্যাদি।

৩. যে সকল আইন সম্পূর্ণরূপে ভূমিসংক্রান্ত তেমন ৫টি আইনের নাম লেখ।

উত্তরঃ- ভূমিসংক্রান্ত ৫টি আইনের নাম হলোঃ-

(ক) সার্ভে আইন-১৮৭৫

(খ) খাজনা/কর আইন-১৮৫৯

(গ) ভূমি আপিল বোর্ড আইন-১৯৮৯

(ঘ) বঙ্গীয় ও পয়স্তি আইন-১৮৪৭

(ঙ) ভূমি রেজিস্টেশন আইন-১৯০৮

৪. কবুলিয়ত কী?

উত্তরঃ- সরকার বা জমিদার কর্তৃক চাষিকে জমি বন্দোবস্ত দেয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহন করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গীকারপত্র দিতো এমন অঙ্গীকারপত্রকে কবুলিয়ত বলা হতো। সম্রাট শেরশাহ কবুলিয়ত প্রবর্তন করেন।

৫. নামজারি কাকে বলে?

উত্তরঃ- কোনো মালিক কোনো জমির মালিকানা লাভ করার পর তার নাম সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা বা তার নিখা নামে নতুন খতিয়ান খোলার যে কার্যক্রম তাকে মিউটেশন (Mutation) বা নামজারি বলে

৬. সি.এস. খতিয়ান কী?

উত্তরঃ- সি.এস. এর পূর্ণরূপ হলো Cadastral Survey বা কিস্তোয়ার জরিপ। ১৯১০ সাল থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে সরকারি সার্ভেয়ারগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে এর আয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নিদের্শত মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিবরণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করা হয় তাকে দিলো, খতিয়ান বলে।

৭. আর.এস. খতিয়ান কী?

উত্তরঃ- আর, এস- এর পূর্ণরূপ হলো রিভিশনাল সেটেলমেন্ট। জেলা জরিপ বা সি.এস, জরিপের পর সংশ্লিষ্ট এলাকায়। পুনরায় যে জরিপ করা হয় এবং তার অনুযায়ী খতিয়ান সংশোধন করা হয় তাকে আর.এস, খতিয়ান বলে।

৮. খতিয়ানে কী কী বিষয় উল্লেখ থাকে? (Coxda/2019)

উত্তরঃ-খতিয়ানে যে সকল বিষয়গুলো উল্লেখ থাকেঃ

(ক) ভূমি মালিকের নাম

(খ) পিতার নাম

(গ) মালিকের পূর্ণ ঠিকানা

(ঘ) মালিকের হিস্যা

(ঙ) দাগ নম্বর

(চ) জমির প্রকৃতি ও পরিমাণ ইত্যাদি।

৯. খতিয়ান কাকে বলে?

উত্তরঃ- মৌজায় এক বা একাধিক মালিকের ভূমি মালিকানার যে হিসাব বা বিৰৱণ নির্ধারিত ফর্মে পৃথক পরিচিত নাম্বার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, তাকে খতিয়ান বা স্বত্বলিপি বলা হয়।

১০. D.C.R এর পূর্ণ অর্থ কী?

উত্তরঃ- D.C.R এর পূর্ণ অর্থ হলো-Duplicate Carbon Receipt.

১১. D.C.R কী?

উত্তরঃ- ভূমি কর ব্যতীত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে রশিদ দেওয়া হয়। তাকে Duplicate Carbon Receipt সংক্ষেপেD.C.R বলা হয়। এটি ২২ নং ফরমে দেওয়া হয়।

১২. ওয়াকফ সম্পত্তি কী?

উত্তরঃ- কোনো মুসলমান ব্যক্তি তার নিজস্ব মালিকানাধীন সম্পত্তি ধর্মীয় বা সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য দান করতে পারেন। ধর্মীয় ও সমাজকল্যানমূলক প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করার উদ্দেশ্যে কোনো সম্পত্তি উৎসর্গ বা দান করলে সেই সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলা হয়।

১৩. দেবোত্তর ও পীরোত্তর কাকে বলে?

উত্তরঃ- দেবোত্তরঃ হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানিক আয়োজন, ব্যবস্থাপনা ও সুসম্পন্ন করার ব্যয়ভার নির্বাহের লক্ষ্যে উৎসর্গীয় ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে।

পীরোত্তরঃ ধর্মীয় নেতা তথা পীরকে নিষ্কর স্বত্বে দান করা সম্পত্তিকে পীরোত্তর বলা হয়।

১৪. জোত কী?

উত্তরঃ কোনো মৌজার অন্তর্গত একজন ভূমি মালিকের মালিকানাধীন ভূসম্পত্তি ভূমি রের্কডের ১নং রেজিস্টারের মালিকানার ভিত্তিতে ২নং রেজিস্টারে খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য ও আদায় নিশ্চিত করার্থে যে হিসাব খোলা হয় তাকে জোত বা হোল্ডিং (Holding) বলা হয়।

১৫. বিনিময় সম্পত্তি কাকে বলে?

উত্তরঃ- ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ হতে ভারতে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহনকারীদের সঙ্গে ভারত হতে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে আগমনকারী ও নাগরিকত্ব গ্রহনকারীদের ভূসম্পত্তি বিধি মোতাবেক পারস্পরিক হস্তান্তরকে বিনিময় সম্পত্তি (Exchange property) বলা হয়।

১৬. জোনাল জরিপ বলতে কী বুঝায়?

উত্তরঃ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ভূমি মালিকানার রেকর্ড ও নকশা প্রনয়ন কীভাবে করা যায় এতদবিষয়ে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে ১৯৮৫ সালে সরকার একটি নতুন পদ্ধতির জরিপ কার্যক্রম চালু করে। এটিই জোনাল জরিপ নামে পরিচিত।

১৭. সূর্যাস্ত আইন কী?

উত্তরঃ সূর্যাস্ত আইন ভূমির রাজস্ব আদায়ের একটি আইন।

বর্ণনাঃ ভূমির রাজস্ব বাবদ আয় নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবছর সর্বশেষ দিন বা ৩০ চৈত্রের মধ্যে নির্ধারিত খাজনা আদায় করা হতো যদি কোনো জমিদার ৩০ চৈত্রের মধ্যে খাজনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো তাহলে ঐ দিনই সূর্যাস্তের পর ব্যর্থ জমিদারের জমিদারি নিলামে বিক্রি করে রাজস্ব আদায় করার আইন করা হয় একে সূর্যাস্ত আইন বলে।

১৮. ভূমি সংস্কারে সম্রাট শেরশাহের অবদান উল্লেখ করা।

উত্তরঃ ভূমি সংস্কারে সম্রাট শেরশাহের অবদানগুলো হলো:-

ক) আবাদি জমি সরজমিনে জরিপ করার জন্য আমিন বা সার্ভেয়ার নিয়োগ করেন।

খ) সার্বিক কার্যক্রম তদারক করার জন্য কানুনগো নিয়োগ করেন।

গ) পাট্টা ও কবুলিয়াত প্রথা চালু করেন।

ঘ) সরজমিনে ভূমি জরিপ করার মাধ্যমে খতিয়ান বা নকশা প্রণয়ন করেন।

১৯. ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল কতসালে প্রবর্তিত হয়?

উত্তরঃ- ১৯৯০ সালে।

২০. রেন্ট কমিশন কী?

উত্তর: রেন্ট অ্যাক্টের বিধান বাস্তবায়নের অভাবে প্রজাদের মধ্যেগণ অসন্তোষ নিরসনকল্পে এবং সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপসুপারিশ করার জন্য ১৮৭৯ সালে 'রেন্ট কমিশন' গঠন করা হয়। প্রজার স্বার্থরক্ষা, প্রজা, জমিদার ও সরকারের মধ্যে সু-সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তি রচনা করার জন্য কমিশন প্রজাস্বত্ব আইন পাস করার সুপারিশ করেন।

২১. তৌজি কী?

উত্তর:- জমিদারের জোতজমা এলাকা, খাজনার পরিমাণ ইত্যাদির বিবরণকে তৌজি (Touzi) বলা হয়। অর্থাৎ জমিদারি এস্টেটের তফসিল তথা ভৌগোলিক পরিচয়কে তৌজি বলা হয়।

২২. কানুনগোর প্রধান কাজ কী?

উত্তর:- কানুনগোর প্রধান কাজ মাঠ পর্যায় জরিপের প্রাথমিক পরিদর্শন পূর্বক কাজের গুনগত মান ও পরিমান নিশ্চিত করা।

২৩. ভূমি জরিপের একক কী?

উত্তর:- মৌজা।

২৪. ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী?

উত্তর: ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো খাসজমি, সায়রাত মহাল, জল মহাল, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা করণ ও বিরোধ থাকলে নিস্পত্তি করা।

২৫. খানাপুরি কী?

উত্তর: খানা অর্থ ঘর বা স্থান, জরিপের সময় নকশা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি উত্তর: বানার সরদার আছান, অনিলের সময়চারী কর্তৃক পূরণ করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে। এটি প্রাথমিক রেকর মাত্র। খানাপুরি রেকর্ড প্রস্তুতের সময় দালিলিক প্রমাণ, বৈধ মালিকানা এবং দখলের ভিত্তিতে ভূমি মালিকের নাম। ঠিকানা ও জমির বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। খানাপুরি রেকর্ড কালো কালি দ্বারা লিখতে হয়।

২৬. জাতীয় ভূমি পরিষদের চারটি কার্যাবলি লেখ।

উত্তর: জাতীয় ভূমি পরিষদের চারটি কাজ হলোঃ-

ক) ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

খ) কৃষি ও অকৃষি জমি রাখার সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ ও কার্যকর করা।

গ) ভূমিসংস্কার আইনের বাস্তবায়ন।

ঘ) ভূমি মালিকানার ক্ষেত্রে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ন্যায়নীতি নিশ্চিত করা।

২৭. ভূমি ব্যবস্থাপনার সর্বনিম্ন ইউনিট কোনটি?

উত্তর: ইউনিয়ন ভূমি অফিস/তহশিল অফিস।

২৮. সম্পূর্ণ খাই খালাসি রেহেন বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: ঋন হিসেবে গৃহীত অর্থ বা শস্য প্রদান করার উদ্দেশ্যে কোনো প্রজা কর্তৃক কোনো ভূমির দখলাধিকার এই শর্তে হস্তান্তর এক বা যে রেহেনের মেয়াদকালে অনুরূপ জমি হতে প্রাপ্ত মুনাফার দ্বারা সকল সুদসহ ঋন রোধ করাকে বলা হয় সম্পূর্ণ খাই খালাসি রেহেন।

২৯. তসদিক কী?

উত্তর: রেকর্ড প্রস্তুতের ক্ষেত্রে তসদিক স্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বুঝারত পর্যায়ের খড়া খতিয়ানের কোনো ত্রুটি থাকলে। নির্দিষ্ট তারিখ ও স্থানে ভূমি মালিকগণ উপস্থিত হয়ে তা সংশোধন ও পরিমার্জন করিয়ে তসদিক বা সত্যয়ন করিয়ে নেন। রেকর্ড প্রস্তুতের এ স্তরকে তসদিক বলা হয়।

৩০. ভূমি ব্যবস্থাপনার সর্বনিম্ন ইউনিট কী?

উত্তর:- ভূমি ব্যবস্থাপনার সর্বনিম্ন ইউনিট হলো ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিল অফিস প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি তহশিল অফিস থাকে।

৩১. ১নং রেজিস্টার কী? একে কী বলা হয়?

উত্তর: খতিয়ান ভলিউম বা ভূমি রেকর্ডকে ১নং রেজিস্টার বলা হয়। একে জমাবন্দি রেজিস্টার বলা হয়

৩২. জরিপ কাজের স্তরগুলো লিখ।

উত্তর: নিম্নে জরিপ কাজের স্তরগুলো দেয়া হলোঃ-

ক) ট্রাভার্স সার্ভে

খ) কিস্তোয়ার জরিপ

গ) সীমানা চিহ্ন নিমার্ণ/স্থাপন

ঘ) খানাপুরি/প্রাথমিক স্বত্বলিপি লিখন।

ঙ) তসদিক বা সত্যয়ন করা।

চ) খসড়া রেকর্ড প্রকাশনা।

৩৩. কী কী তথ্যাদি খতিয়ানে উল্লেখ করতে হবে?

উত্তর:- নিম্নলিখিত বিষয় খতিয়ানে উল্লেখ করা হয়ঃ-

ক) প্রত্যেক মালিকের নাম, পিতার নাম।

খ) মালিকের পূর্ণ ঠিকানা।

গ) জমির শ্রেণি, পরিমাণ ও দখলকারের বিবরণ।

ঘ) প্রজাস্বত্বের কোনো বিশেষত্ব থাকলে।

ঙ) সাধারণ ব্যবহার্য অধিকার থাকলে।

চ) স্বত্বলিপি পরিমার্জনকালীন প্রদানযোগ্য খাজনা।

৩৪. এস্টেট ম্যানুয়াল কত সালে জারি করা হয়?

উত্তর: ১৯৫৮ সালে।

৩৫. ভূমি অধিগ্রহন ও ভূমি হুকুমদখল বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: ভূমি অধিগ্রহন (Acquisition):- কোনো স্থাবর সম্পত্তির দখল বা মালিকানা স্বত্ব সরকার আইন মোতাবেক অধিগ্রহন করলে তাকে ভূমি অধিগ্রহন বলে।

ভূমি হুকুমদখল (Requisition):-কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির শুধুমাত্র দখল সরকার অস্থায়ীভাবে অধিগ্রহন করলে তাকে ভূমি হুকুমদখল বলে।

৩৬. শত্রু সম্পত্তি বলতে কী বুঝায়?

উত্তর:- যে ব্যক্তি পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সাথে যুদ্ধে লিপ্ত কোনো দেশের নাগরিক অথবা অতীতে যে কোনো সময় ঐ দেশের নাগরিক ছিল কিন্তু অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে নাই তাদেরকে শত্রু নাগরিক তার সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি বলা হয়।

৩৭. ভূমি অধিগ্রহনে ইচ্ছুক কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবের সাথে কী কী কাগজপত্রাদি আনতে হবে?

উত্তর: ভূমি অধিগ্রহনে ইচ্ছুক কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবের সাথে যে সকল কাগজপত্রাদি আনতে হবেঃ-

ক) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন।

খ) সর্বনিম্ন পরিমাণ জমির প্রয়োজনীয়তার প্রত্যয়নপত্র।

গ) লে আউট প্ল্যান ও সাইট প্ল্যান

ঘ) লাল কালিতে চিহ্নিত অ্যালাইনমেন্ট

ঙ) জমির তফসিল

চ) ভূমির বরাদ্দ কার্যবিবরণী ইত্যাদি।

৩৮. সম্পত্তি হুকুমদখল কী?

উত্তর: যখন কোনো সম্পত্তি সাময়িকভাবে জনস্বার্থে অথবা সরকারি কাজে প্রয়োজন হয় জেলা প্রশাসক সরকারের পূর্বানুমতি নিয়ে লিখিত আদেশে যে সম্পত্তি গ্রহন করেন তাকে সম্পত্তি হুকুমদখল বলে।

৩৯. অর্পিত সম্পত্তি কী?

উত্তর: অর্পিত সম্পত্তি অর্থ হলো সরকারের নিকট ন্যস্ত জমি। অর্থাৎ যে সকল সম্পত্তির মালিক একমাত্র সরকার যা সরকার সকল বন্টন, হিস্যা ও ব্যবস্থাপনা করবেন।

৪০. কবলা দলিল কী?

উত্তর: রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তর করার আইনানুগ রেজিস্টার্ড ডকুমেন্টকে কবলা দলিল বলা হয়। কবলা দলিল দ্বারা একজনের স্বত্ব দখলীয় জমির উপর ক্রেতার স্বত্ব জন্মায়।

৪১. বাটোয়ারা দলিল (Partition deed) কী?

উত্তর: কোনো সম্পত্তির শরিকানদের এজমালি হলে সম্পত্তি আপোশে মৌখিকভাবে বন্টন হতে পারে এবং বন্টনের পর অক্ষগণ তাদের প্রাপ্ত জমি পৃথকভাবে দখল করতে পারবে। মৌখিক বন্টনের পর কোনো শরিক কোনো জমি পেলে যা যদি লিখিত তালিকা করে রাখা হয় এ তালিকাকে বাটোয়ারা দলিল (Partition deed) বলা হয়।

৪২. রেজিস্ট্রেশন আইন কাকে বলে?

উত্তর: মূল্যবান সম্পদ বা স্বত্ব অধিকার সম্পর্কিত দলিলাদি রেজিস্ট্রির যে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় তা পুনরায় ফিরিয়ে আনা ও তার সম্পর্কিত তথ্যাদি/বিবরণ যে আইনের বর্ণনা করা হয়, তাকে রেজিস্ট্রেশন আইন বলা হয়।

৪৩. বাংলাদেশের ভূমিকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

উত্তর:- বাংলাদেশের ভূমিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) কৃষিজমি

খ) অকৃষিজমি

৪৪. পরিত্যক্ত সম্পত্তি কী?

উত্তর: বাংলাদেশে অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তি, অনুপস্থিত বা সন্ধানহীন ব্যক্তি বা স্বীয় সম্পত্তি দখল, তত্ত্বাবধান বা পরিচালনে অক্ষম ব্যক্তির কোনো সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলে।

৪৫. "মুসলিম উত্তরাধিকার" আইন বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: ফারায়েজ।

৪৬. মুসলিম আইন অনুযায়ী কোনে ছয় ব্যক্তি উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় না?

উত্তর:

ক) মাতা,

খ) পিতা,

গ) স্বামী,

ঘ) স্ত্রী,

৬) পুত্র,

চ) কন্যা।

৪৭. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কাকে বলে?

উত্তর: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভূমির রাজস্ব আদায়ের একটি ব্যবস্থাপনা আইন। ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিস এ আইনটি ঘোষণা করেন।

৪৮. রেন্ট কমিশন কী?

উত্তর:- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদাররা জমিদারি রক্ষার উদ্দেশ্যে খাজনা আদায়ের জন্য প্রজাদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন বৃদ্ধি করে। ফলে প্রজাদের মধ্যে গণ অসন্তোষ দেখা দেয়। এ গণ অসন্তোষের কথা বিবেচনা করে ১৯৫৯ সালে যে আইন পাস করা হয় তাকে রেন্ট কমিশন বলে।

৪৯. কতসালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষনা ও জারি করা হয়?

উত্তর:-১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন ঘোষনা ও জারি করেন।

৫০. মুসলিম ফরায়েজের সাধারণ নিয়মগুলো লেখ।

উত্তর:- মুসলিম ফারায়েজের সাধারণ নিয়মগুলো হলো:-

(ক) প্রত্যেক পত্র প্রত্যেক কন্যার দ্বিগুন পাবে। অর্থাৎ প্রত্যেক বোন প্রত্যেক ভাইয়ের অর্ধেক পাবেন।

(খ) যদি  পুত্র না থাকে এবং মাত্র এক কন্যা থাকে তবে কন্যা অংশ প্রাপ্য। একাধিক কন্যা থাকলে অংশ তুল্যাংশে প্রপ্য।

 (গ) সন্তান বর্তমান স্ত্রী অংশ এবাং নিঃসন্তান স্ত্রী অংশ প্রাপ্য। 

 (ঘ) সন্তান বর্তমানে স্বামী অংশ প্রাপ্য।

(ঙ) সন্তান বর্তমানে পিতা অংশ পাবে। সন্তান না থাকলে পিতা অপর অংশীদারের অংশ বাদে বাকি অংশ প্রাণা।

(চ) সন্তান বর্তমানে মাতা অংশ প্রাপ্য। সন্তান না থাকলে মাতাত অংশ প্রাপ্য। । কিন্তু দুই বা ততোধিক ভাইবোন

থাকলে মাতার স্বামী অথবা স্ত্রীর। অংশ বাদে যা অবশিষ্ট থাকবে। মাতা তার অংশ পাবে।

(ছ) পুত্র বর্তমানে ভাইবোন ওয়ারিশ হয়না

(জ) পুত্র, কন্যা বা ভাইবোন না থাকলে দূরবর্তী জ্ঞাতিগন ওয়ারিশ হয়।

৫১. সিকস্তি কাকে বলে?

উত্তর:-সিকস্তি ফার্সি শব্দ। নদী বা সমুদ্রের ভাঙনের কারনে যে জমি নদী বা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায় উহাই সিকন্ধি জমি নামে পরিচিত। সিকস্তি ভূমির শ্রেনিবিন্যাস নেই।

৫২. Reform in situ কাকে বলে?

উত্তর:- যদি কোনো সিকস্তি ভূমি পূর্বের জায়গায় জেগে উঠেছে বলে শনাক্ত করা যায়, তবে এই প্রকার ভূমিতে স্বস্থানে পুনঃউদ্ভব বাReform in situ বলা হয়।

৫৩. মৌজা কী?

উত্তর:- কিস্তোয়ার জরিপের সময় প্রতি থানা (বর্তমানে উপজেলা) এলাকাকে অনেকগুলো এককে বিভক্ত করে প্রত্যেকটি এককের ক্রমিক নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করে জরিপ করা হয়। এ সকল প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলা হয়। এক বা একাধিক পাড়া বা গ্রাম নিয়ে মৌজা গঠিত হয়।

১৮৭৫ সালের জরিপ আইন মোতাবেক' আলাদা ভৌগোলিক পরিচিতিমূলক এলাকাকে মৌজা বলা হয়।

৫৪. ভূমিসংস্কার কী?

উত্তর:- ভূমিসংস্কার এর মূল অর্থ হলো ভূমির ব্যবহার, আইন কানুন, যুগের ও চাহিদার সাথে সংগতি রেখে পরিবর্তনও পরিবর্ধনের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমির বণ্টন বিষয়ে একটি সার্বিক পরিবর্তন সূচিত করা।

৫৫. বাস্তুভিটা বলতে কী বুঝায়?

উত্তর:- যে ভূমি বা ভিটাতে বর্গাচাষি বা মালিক বসবাস করেন এই সকল ভূমিকে বলে বাস্তুভিটা। কোনো মালিক বা বর্গাচাষিদের ৫ বিঘার অতিরিক্ত জমি বাস্তুভিটার জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হবে না। কোনো মালিক বা বর্গাচাষিকে তার বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

৫৬. ম্যাগনাকার্টা আইন কোনটি?

উত্তর:- বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনকে কৃষক সমাজের "মহাসনদ" বা ম্যাগনাকার্টা বলা হয়।

৫৭. বঙ্গীয় জরিপ আইন, ১৮৭৫ এর উদ্দেশ্যে কী কী?

উত্তর:- বঙ্গীয় জরিপ আইন ১৮৭৫ এর উদ্দেশ্য হলোঃ-

ক) ভূমি চিহ্নিতকরণ

খ) ভূমি সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করা।

গ) ভূ-সম্পত্তিতে অনাধিকার প্রবেশ রোধ করা।

ঘ) ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ

৫) ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিকরণ

চ) সীমানা পৃথকীকরণ

ছ) ভূমির সঠিক বিবরণ।

৫৮. কালেক্টর কাকে বলে?

উত্তর: কালেক্টর জেলার প্রধান সরকারি ভূমি রাজস্ব কর্মকর্তা। জেলা পর্যায়ের যে প্রধান কর্মকর্তা ভূমি আইন মোতাবেক ভূমি রাজস্ব ধার্য ও আদায় করার জন্য কর্তৃত্ব প্রাপ্ত, তাকে কালেক্টর বলে। বর্তমানে এ পদ ডেপুটি কমিশনার বা জেলা প্রশাসক নামে পরিচিত।

৫৯. ভূমি প্রশাসন কী?

উত্তর:- অতীতে ভূমি প্রশাসন (Land Administration) বলতে শুধু কর/ খাজনা আদায়কেই বুঝাত। বর্তমানে ভূমি প্রশাসন বলতে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে বুঝায়।